নিজেরা সেলিব্রেটি হতে গিয়ে মাত্র তোরো বছর বয়সী এক শিশুর গলায় দা ঠেকিয়ে মাদক সেবন করিয়ে টিকটক ভিডিও চিত্র ধারণ করায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে কিশোর গ্যাং’র ৮ সদস্য গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ।
সোমবার গ্রেফতারকৃতদের ডিজিটাল নিরাপওা ও শিশু নির্যাতন আইনে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বিপিএম’র নজরে গোটা বিষয়টি আসার পর পরই গোয়েন্দা ও থানা পুলিশকে বিশেষ নির্দেশানা দিলে সোমবার কয়েকদফা অভিযান চালিয়ে ওই কিশোর গ্যাং’র সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হল, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পাগলপুর গ্রামের হরমুজ আলীর ছেলে মনির হোসেন একই উপজেলার বাদাঘাট (কাশতাল চরগাঁও) গ্রমের হাবিবুর রহমান সংগ্রামের ছেলে মজিবুর রহমান সাগর, কামড়াবন্দ গ্রামের কাঁচামাল ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়ার ছেলে তোফিকুল ইসলাম রনি, বাদাঘাট গ্রামের আব্দুর রহমান শেখের ছেলে আলম শেখ, একই গ্রামের আনোয়ারের ছেলে আনিসুল বারি তারেক, পৈলনপুর গ্রমের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে মোজাম্মেল হক, বাদাঘাট বাজারের খোরশেদ আলমের ছেলে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাজির হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসান দিপু।
রবিবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় ১০ জনের নামোল্লেখ করে উপজেলার কামড়াবন্দ গ্রামের নেকবর মিয়ার ছেলে মোশারফ ওরফে আরিয়ান, একই গ্রামের মৃত ছাক্তারের ছেলে জিসান ওরফে বকুলকে পলাতক আসামী করে অজ্ঞাত নামা আরো ৭ হতে ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
অপরদিকে গ্রেফতার মজিবুর রহমান সাগর, তোফিকুল ইসলাম রনি ও পলাতক আসামী মোশারফ ওরফে আরিয়ান, জিসান ওরফে বকুল এ কিশোর গ্যাং’র চার সসস্যের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইমের পাশাপাশী, এলাকায় ইভটিজিং, ইয়াবা- বাবাসহ নানা মাদক বিক্রয়- সেবন, নিরীহ পরিবারের কিশোর-কিশোরী, স্কুল গামী ছাত্রীদের ভয় ভীতি দেখিয়ে ব্লাক মেইলিং করা এমনকি এলাকার বিদ্যুতের বাল্ব, লোহা জাতীয় সামগ্রী, ফ্যান, টিউবওয়েলের বডি, পানির মোটর, বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সব ধরণের ছোট বড় চুরির মত অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে।
মামলা ও ভিকটিমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার লাউরগড় (ঢালারপাড়) গ্রামের দিনমজুর সিরাজুল ইসলামের ১৩ বছর বয়সী শারীরিক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু সন্তান শরিফ মিয়াকে বখে যাওয়া কিশোর গ্যাং’র সদস্যরা নিজেরা সেলিব্রটি হতে গিয়ে মাদক সেবন, গলায় ধারালো দা ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে মারধর করে টিকটকের জন্য একাধিবার ভিডিও চিত্র ধঅরণ করে।
চলতি বছরের জুলাই হতে ধারণকৃত ভিডিও চিত্রগুলো কিশোর গ্যাং’র সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নিজেদের বিভিন্ন গ্র“প, পেইজ, টিকটকে, ইউটিউবে পোষ্ট করে।
এ ধরণের আপত্তিকর, ভীতিকর বেশ কয়েকটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশ ও প্রবাসের নেটিজেনরা প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি তুলেন।
এ ঘটনায় শনিবার ‘বাংলাদেশ সিভিলিয়ান ফোর্স’ নামে একটি ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজ হতে ফের ভিডিও চিত্র পোষ্ট করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের আইজিপি, ডিআইজি, পুলিশ সুপার, র্যাব সহ আইনশৃংখলা বাহিনী দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
বিষয়টি রবিবার সকালে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের নজরে আসার পর ওই ভেলা ১১টা হতে রাত ১১টা অবধি গোয়েন্দা ও থানা পুলিশ, বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা থানার ওসি মো. আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত কিশোর গ্যাং’র ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেন।
সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বিপিএম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথমত প্রতিটি পরিবার থেকেই কিশোরদের অপরাধ প্রবণতার পথ প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে, এরপর আইনি ব্যবস্থা তো রয়েছেই।
তিনি আরো বলেন, মাদক, চোরাচালান, ইভটিজিং, বখাটেপনা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, চাঁদাবাজিসহ যে কোন ধরণের অপতৎপরতা রোধে জেলার সকল থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশকে তৎপরতা রাখা হয়েছে। (খবর সংবাদদাতার)