কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইউক্রেন সঙ্কট আরও মারাত্মক আকার নিয়েছে। মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে একটি দলিলে স্বাক্ষরের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়। এসব দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞার কথা বলেছে। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্মত হয়েছেন যে, এ পদক্ষেপকে জবাবহীন ছেড়ে দেয়া যাবে না। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীন সকল পক্ষকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পুতিনের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, এটি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, রুশ ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক অখন্ডতা ও ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘ সনদের নীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। অবশ্য পুতিনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সিরিয়া ও নিকারাগুয়া। পুতিনের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাশিয়ার পাঁচটি প্রধান ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ব্রিটেন। অপরদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে একটি গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন মঙ্গলবার এক টিভি ভাষণে বলেন, মস্কো পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। পুতিন ইউক্রেন সম্পর্কে বলেন, এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোনি। একটি পুতুল সরকার ইউক্রেন চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন কোন দিনই প্রকৃত রাষ্ট্র ছিল না এবং আধুনিক ইউক্রেন রাশিয়ার দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। পুতিনের এ বক্তব্যের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, আমরা শান্তি এবং কূটনৈতিক পথের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা এই পথ অনুসরণ করব এবং কেবল এটিই করব। আমরা নিজেদের ভূমিতে আছি। আমরা কোন কিছু এবং কাউকে ভয় পাই না। আমরা কাউকে পরোয়া করি না, কাউকে দেশ দখল করতে দেব না। তিনি আরও বলেন, আমাদের অংশীদারদের কাছ থেকে পরিষ্কার এবং ফলপ্রসূ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। কারা আমাদের প্রকৃত বন্ধু এবং অংশীদার, সেটি দেখাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার রুশ সিন্ধান্তের পর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও ইউরোপিয়ান ফরেন পলিসি প্রধান জোসেপ বোরেল একমত হয়েছেন, ব্রিটেন এবং ইইউ পুতিনের শাসনকালের ওপর দ্রত নিষেধাজ্ঞা দেবে এবং ইউক্রেনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, আমরা রাশিয়ার কাছ থেকে এ ধরনের একটি পদক্ষেপ আশঙ্কা করেছিলাম। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে এর জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, মস্কো ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সব সময় আর্থিক এবং সামরিক সহায়তা সরবরাহের মাধ্যমে সংঘাতে জ্বালানি জুগিয়েছে। রাশিয়া আবারও সেখানে আগ্রাসন চালানোর জন্য একটি মঞ্চ তৈরির চেষ্টা করছে। এটি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সংঘাতের সমাধানে শান্তি প্রচেষ্টা এবং মিনস্ক শান্তি চুক্তির লঙ্ঘন।
অস্থির তেলের বাজার : পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা দিয়ে সেখানে রুশ সেনা প্রবেশের পর বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক শেয়ারবাজারেও গতকাল থেকে সূচক পড়ছে। তেল সরবরাহে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে- এমন আশঙ্কায় তেলের দাম বাড়ছে। মঙ্গলবার ব্যারেল প্রতি দাম বেড়ে ৯৮ দশমিক ২১ মার্কিন ডলারে উঠে গেছে, যা বিগত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।