কাজিরবাজার ডেস্ক :
কারাগারে বন্দীজীবন অতিবাহিত করা মেজর সিনহা হত্যা মামলার একাধিক আসামির গত দুইদিন ধরে ইবাদতের কমতি নেই। যে যার ধর্মমতে ইবাদতে মনোযোগী হয়ে পড়েছেন। রবিবার সকালে জেলখানায় নিয়মমাফিক দেয়া খাবারের জন্য আসেনি সিনহা হত্যা মামলার তিন আসামি। রবিবার সকালে কারাগার থেকে কোর্টে হাজিরা দিতে আসা একাধিক আসামি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার একাধিক আসামির কারাগারে তাদের খাওয়া-দাওয়ার দিকে মনোযোগ নেই। সর্বদা চিন্তিত মন তাদের। বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন, তারিখ আজ সোমবার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ তাকিয়ে আছে কক্সবাজারের দিকে। আদালতের বিষয় নিয়ে কেউ মন্তব্য না করলেও আলোচিত এই হত্যা মামলার রায়ে ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতসহ ১৫ আসামির কী শাস্তি হতে পারে- এ নিয়ে জনমনে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। কৌতূহলের কারণ হচ্ছে- টেকনাফে ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রদীপ কুমার দাশ ২০৪ জন মানুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে। তন্মধ্যে সবাই মাদক কারবারি নয়। ধনাঢ্যশালী ব্যক্তিদের ইয়াবার তকমা দিয়ে ধরে থানায় নিয়ে যাবার পর লাখ লাখ টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়নি প্রদীপ। মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের গোমর ফাঁস হয়ে পড়ার ভয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। বন্দুকযুদ্ধের নামে থানায় মামলা ঠুকে দেয়ার সময় এজাহারে পিতা হত্যায় পুত্রদেরও আসামি করা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত এসব হত্যায় দায়ী করে অনেকে প্রদীপের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলাও করেছে। কিন্তু, মানুষ মারার পরপরই দুর্দান্ত শেয়ান ব্যক্তি প্রদীপ দাশ ক্রসফায়ারে নিহত ঘটনায় থানায় মামলা রুজু করে রেখেছে, যার কারণে ফরিয়াদিরা আদালতের আশ্রয় নিলেও ফলপ্রসু কিছু হয়নি। এ কারণে মেজর সিনহা হত্যার দায়ে বরখাস্ত ওসি প্রদীপের কী শাস্তি হচ্ছে- দেখতে রবিবার সন্ধ্যা থেকে টেকনাফের লোকজন কক্সবাজারে আসা শুরু হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, মেজর সিনহা কক্সবাজারের বাসিন্দা না হওয়া সত্ত্বে¡ও পর্যটন নগরীর লোকজন পুলিশের গুলিতে নিহত এই মেজর সিনহা হত্যার জন্য পরিবার যেন সুবিচার পায়- গত দেড় বছর ধরে এই প্রত্যাশায় প্রহর গুনছেন স্থানীয়রা। কক্সবাজারের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। টেকনাফে পর্যায়ক্রমে গুলি করে দুই শতাধিক মানুষ হত্যা করলেও কেউই ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। তবে, সাহসী নারী মুক্তিযোদ্ধার কন্যা মামলার বাদী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের চেহারা দেখতে এবং তাকে ধন্যবাদ জানাতে আজ সোমবার বহু মহিলা আসবেন টেকনাফ থেকে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর সিনিয়র আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, ষড়যন্ত্র করে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মেজর সিনহাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ওসি প্রদীপ, লিয়াকতসহ অন্য আসামিরা। সেটা আদালতের সামনে স্পষ্টভাবে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি। বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ময়না তদন্ত রিপোর্টের বরাত দিয়ে বলেন, প্রদীপ যখন নিশ্চিত হলো যে, মেজর সিনহা মরে যায়নি, তখন বাম পাশের পাঁজোরে পর পর বুট জুতা দিয়ে লাথি দিয়েছে, যাতে করে সিনহার তিনটা হাড় ভেঙ্গে গেছে। আমরা আশা করছি, এই মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হোক।