কাজিরবাজার ডেস্ক :
ফের করোনার প্রকোপ বাড়ায় উচ্চ আদালতে ভার্চুয়ালি বিচারকাজ শুরু হলেও নিম্ন আদালত চলছে আগের মতোই। যদিও গত ২২ জানুয়ারি ভার্চুয়ালি ও শারীরিক উপস্থিতিতে দু’ভাবেই নিম্ন আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে মর্মে সার্কুলার জারি করা হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে।
তবে নানা কারণে নিম্ন আদালতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক উপস্থিতিতেই বিচারকাজ চালাতে আগ্রহী বিচারক ও আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘প্রয়োজনীয় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক শারীরিক উপস্থিতিতে অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে সব প্রকার মামলা করা যাবে। বিচারক শারীরিক উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিরা অধস্তন ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে শারীরিক উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ আবেদন দাখিল করতে পারবেন। ’
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিম্ন আদালতে একজন বিচারককে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়। মামলা দায়ের, সাক্ষ্যগ্রহণ ও আত্মসমর্পণপূর্বক জামিনের শুনানি শারীরিক উপস্থিতিতে নিতে বলা হয়েছে। এখন শুধু হাজতি আসামিদের জামিন শুনানি ভার্চুয়ালি করার সুযোগ থাকছে।
ফলে আইনজীবী ও বিচারকদের ভার্চুয়াল পদ্ধতির পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক উপস্থিতিতেও বিচারকাজে অংশ নিতে হচ্ছে। এভাবে কাজ করতে গেলে জটিলতা আরও বেড়ে যায়। তাই সংশ্লিষ্ট আদালতগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই কাজ চালিয়ে যেতে চান তারা।
বিশেষ করে ভার্চুয়াল বিচারকাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে ধীরগতি, দক্ষ জনবলের অভাব এবং প্রয়োজনীয় আইটি সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় আরও বেশি জটিলতা দেখা দেয় এবং সময় অপচয় হয়।
ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুনানির পরিবর্তে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ঢাকার সংশ্লিষ্ট আদালতে কিছু নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
গত ২৪ জানুয়ারি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) রেজাউল করিম চৌধুরী পৃথক আদেশে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কিছু নির্দেশনা জারি করেন।
এর মধ্যে রয়েছে- সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, আদালতের এজলাস, সেরেস্তা ও বারান্দা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিহিত অবস্থায় থাকা এবং প্রত্যেক মামলায় সর্বোচ্চ দুজন আইনজীবী ও একইসঙ্গে এজলাসে সর্বোচ্চ পাঁচজনের বেশি আইনজীবী অবস্থান না করা ইত্যাদি।
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, আমাদের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণসহ সব ধরনের শুনানিই হচ্ছে। তবে ফৌজদারি বিবিধ মামলায় জামিন শুনানির ক্ষেত্রে একসঙ্গে ১০ জন আইনজীবীর বেশি এজলাসে উপস্থিত না থাকার নিয়ম করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সময় আবেদন এবং সাক্ষ্যগ্রহণ আপাতত স্থগিত রাখা হলে অনেকাংশেই ভিড় এড়ানো সম্ভব হতো।
ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল বলেন, আমাদের আদালতের কার্যক্রম আগের মতোই চলছে। ওমিক্রনের কারণে আলাদা কোনও পদক্ষেপ এখনও আমার চোখে পড়েনি।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির নেতারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে তারা সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
সমিতির সিনিয়র সহ-সম্পাদক এ কে এম সালাহউদ্দিন বলেন, আইনজীবীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পড়া, জমায়েত না করাসহ কোভিড বিষয়ে সচেতন করতে বারের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বলেছি হাজিরা এবং সময় আবেদনগুলো যেন সরাসরি মঞ্জুর করে দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে সেভাবেই হচ্ছে। তবে আইনজীবীদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।
এদিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সদস্যদের টিকার বুস্টার ডোজ দেয়ার জন্য বুথ স্থাপনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করা হয়েছে।