‘ সর্বত্র রাজাকারের ভূত চেপে বসেছে’ ॥ প্রশ্নপত্রে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকে ‘মৃত্যু’ বলে উল্লেখ!

14

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?’ একটি বেসরকারি মেধাবৃত্তি পরীক্ষার সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে এরকম একটি প্রশ্ন করা হয়। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জনক ছিলেন। তিনি মৃত্যুবরণ করেননি, তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন এরকম কেন? আয়োজকসহ কেহই এর দায়ভার নিতে চাননা বা এ বিষয়ে তাদের কোন দায়িত্ব নেই বলে এড়িয়ে যান। ঘটনাটি মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলায় ঘটেছে।
জানা যায়, শনিবার (৩ ডিসেম্বর) জুড়ী সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘জুড়ী মেধাবৃত্তি পরীক্ষা-২০২২’ এর দ্বাদশ মেধা নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্টিত হয়।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিংকু রঞ্জন দাস, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রনজিতা শর্মা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মহিউদ্দিন আহমদ পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট সময়ের ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় বাংলা, ইংলিশ, গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে ১। ক) তে প্রশ্ন ছিল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কত সালে মৃত্যুবরণ করেন? এ প্রশ্ন নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
‘শিক্ষকরা আমাদের সন্তানদের ক্ষতি করতে পারে’ এরকম আশংকা ব্যক্ত করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির জনক ছিলেন। কিন্তু প্রশ্নে কথাটি লেখা হয়নি। তাছাড়া রাতের আধারে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে ঘাতকরা নির্মম ভাবে হত্যা করে। দীর্ঘদিন পর সে হত্যা কান্ডের বিচার হয়, অনেক খুনীর ফাঁসি হয়। কিন্তু উল্লেখিত বৃত্তি প্রকল্পের আয়োজকরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে হত্যা কান্ডের বিষয়টি গোপন করে সেটাকে মৃত্যুবরণ বলে শিক্ষার্থীদের ভুল বার্তা দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়, জাতির জনকের কন্যা দেশের প্রধানমন্ত্রী। এমতাবস্থায় এরকম দুরভিসন্ধি কাজ কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না। এটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বলে আমরা মনে করি। এটার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।
‘প্রশ্ন করার দায়িত্ব অন্য একজনকে দিয়েছিলাম। নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা প্রশ্ন দেখিনি’ এরকম বক্তব্য দিয়ে দায় এড়াতে চান প্রকল্পের সভাপতি জুড়ী উপজেলার দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসখ রুদ্র পাল ও প্রকল্পের সম্পাদক জুড়ী মডেল একাডেমি’র (কে.জি) প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, দাওয়াত পেয়ে পরীক্ষা দেখতে যাই। প্রশ্নে বিষয়ে আমার কিছু করার নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)’র দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রতন কুমার অধিকারী বলেন, পরীক্ষার বিষয়ে আমি অবগত নই বা এ বিষয়ে আমার করণিয় নেই।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিংকু রঞ্জন দাস বলেন, পরীক্ষার হল গুলো পরিদর্শন করেছি। তবে, প্রশ্ন দেখিনি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুক মিয়া বলেন, সর্বত্র রাজাকারের ভূত চেপে আছে। এ বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। খোঁজ নিয়ে দেখব।