কাজির বাজার ডেস্ক
তীব্র গরমের মধ্যে কালো কোট আর গাউন পরে আদালতে যেতে হবে না আইনজীবীদের।
‘হিট স্ট্রোকে’ ঢাকার আদালত চত্বরে এক তরুণ আইনজীবীর মৃত্যুর দুদিন পর এই বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছে।
শনিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের অন্য বিচারপতিদের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশের সব আদালতে পুরুষ বিচারক এবং আইনজীবীরা সাদা ফুল শার্টের সঙ্গে সাদা নেক ব্যান্ড ও কালো টাই পরবেন। আর নারী আইনজীবীরা সাদা শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ পরে আদালতে যাবেন। এই নির্দেশনা আর রবিবার থেকেই কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া পর্যন্ত চালু থাকবে বলে জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই গরমে আইনজীবীদের কোট-গাউনে হাঁসফাঁস আর কতদিন?
গরমের দিন এই কালো পোশাক পাল্টানো নিয়ে আইনজীবীদের এই দাবি নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই তারা গ্রীষ্মে কালো কোট ও গাউন পরার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে কথা বলে আসছেন।
পোশাক পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন জেলা আদালত ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণেও হাতে হাত ধরে মানববন্ধন করেন তারা। ‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতীক’ এই পোশাক স্বাধীন দেশে চলতে পারে না, এমন যুক্তিও দেখাচ্ছিলেন কেউ কেউ।
সম্প্রতি আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য গ্রীষ্ম ও শীতকালীন আলাদা পোশাক নির্ধারণের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির, মো. কাউছার ও বায়েজীদ হোসাইন।
এতে বলা হয়, আইনজীবীরা প্রতি বছরের মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত উচ্চমাত্রার গরমের কারণে নিদারুণ, অসহনীয়, অবর্ণনীয়, শারীরিক ও মানসিক কষ্ট সহ্য করে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে লাখো লাখো বিচারপ্রার্থীকে আইনি সেবা দিয়ে আসছেন। একই সঙ্গে নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বিচারকরা একই ধরনের পোশাক পরিধান করায় অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছেন।
অতিরিক্ত গরমে কালো কোট, গাউন, কলার, ব্যান্ড/টাই পরার কারণে প্রতি বছর বহু আইনজীবী ‘হিট স্ট্রোকে’ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন এবং অনেক আইনজীবী অসুস্থ হয়ে পড়েন বলেও উল্লেখ করা হয় আবেদনে।
করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে ‘ড্রেস কোড’ পরিবর্তনে বিচারকাজ বা আইনজীবীদের কোনো অসুবিধা হয়নি বলেও তিন আইনজীবী তাদের আবেদনে উল্লেখ করেন।
সিদ্ধান্তে সন্তোষ আইনজীবীদের : কালো কোট-গাউন পরার বাধ্যবাধকতা শিথিলে সন্তোষ জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তবে এই সিদ্ধান্ত আরও আগে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল বলেও মনে করেন তারা। পারভেজ হাসেম নামে ঢাকার এক আইনজীবী বলেন, এ সিদ্ধান্ত কেন গনমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর নিতে হল?
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোমতাজ উদ্দীন মেহেদী বলেন, আপাতত বাঁচা গেল। এটা যেন বছরের গরমের দিনগুলোতে কার্যকর থাকে।
আইনজীবী দুলাল মিত্র বলেন, এ সিদ্ধান্ত আপাতত আমাদের বাঁচিয়ে দিল। পরেও অন্তত গরমের দিনে এটা জারি থাকা উচিৎ।
ঢাকার মহানগর পিপি আবদুল্লাহ আবু বলেন, যখন সোয়েটার, জাম্পার, বেøজার পড়তে হয়, তখন কোট-গাউন আদালতে চলুক। বাকি মাসগুলোতে এটার দরকার নাই।
বড় জোর বছরের ৪ মাস কোট গাউন বাধ্যতামূলক রাখা যায়। বাকি সময়টাতে নয়। তবে সাদা শার্ট, কালো টাই, ব্যান্ড অবশ্যই বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, কালো কোট-গাউন গরমে পরা স্থগিত করা ঠিক হয়েছে, তবে তার চেয়ে বড় উদ্যোগ হবে দেশের সকল আদালতের সকল এজলাস এয়ার কন্ডিশনের আওতায় আনা। বিচারকদের খাস কামরায় এসি থাকলে আইনজীবীরা কেন বঞ্চিত থাকবেন?