নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন

5

নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য এতদিন দেশে কোন আইন ছিল না। কমিশন গঠনের এখতিয়ার ছিল রাষ্ট্রপতির। মেয়াদ শেষে রাষ্ট্রপতি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিতেন। এ নিয়ে শুরু হতো বিতর্ক। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বর্তমান সরকার গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনে স্থায়ী আইন প্রণয়ন করেছে। সংবিধানে নির্দেশিত ও বহুল আলোচিত আইনটি পাস হয়েছে জাতীয় সংসদে। নতুন আইন অনুযায়ী কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন। কমিটির সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি। সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারী কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক, যাদের একজন হবেন নারী। উল্লেখ্য, ইতোপূবে গঠিত দুটি নির্বাচন কমিশনই গঠিত হয়েছে অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতি এই কমিটি গঠন করে দিতেন। এবার জাতীয় সংসদে গৃহীত নতুন আইনের মাধ্যমে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের একটি নীতিমালা তৈরি করা হলো। অনুসন্ধান কমিটি গঠনের পর ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে একটি নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব দিবেন। প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি দেশের নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।
যথারীতি আইনটির বিরোধিতা করেছে বিরোধী দল বিএনপি। এক প্রতিক্রিয়ায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারী দল ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য এই আইন প্রণয়ন করেছে। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়েও দলটির দুই সদস্য আইনের সমালোচনা করেছেন। তারা অবশ্য বিকল্প কোন পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেননি। জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ইসি গঠনে অনুসন্ধান কমিটির ধারণায় ২০১২ সালে দেশের সকল রাজনৈতিক দল সম্মত হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে ইতোমধ্যে দুটি কমিশন গঠিত হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের সময় এই আইনের দাবি ওঠে। তখন প্রধানমন্ত্রী আইনটি করার কথা বলেছিলেন। এবার তা বাস্তবায়ন হয়েছে। উল্লেখ্য, আইন প্রণয়নের আগে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুসন্ধান কমিটির ধারণায় বিএনপি সমর্থন জানিয়েছিল। এবার তারা রাষ্ট্রপতির ডাকে সাড়া দেয়নি। সংসদে অন্যান্য বিরোধী দল অবশ্য আইনটিতে সমর্থন জানিয়েছে। তারা আইনটির ওপর বেশ কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব আনে। প্রস্তাবিত রেকর্ড সংখ্যক ২২টি সংশোধনী প্রস্তাব গৃহীত হয় সংসদে। দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার বিধান যুক্ত করা হয়েছে বিরোধী দলের সদস্যদের প্রস্তাব অনুযায়ী। সব থেকে বড় কথা, দেশ স্বাধীন হবার পর গত ৫০ বছরে নির্বাচন কমিশন গঠনে কোন সুনির্দিষ্ট আইন ছিল না। এবার একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভবিষ্যতে এই আইন সংশোধন কিংবা যুযোপযোগী করা যেতে পারে। দীর্ঘদিন পর এমন একটি উদ্যোগের জন্য সরকার ধন্যবাদ পেতে পারে অবশ্যই।