ওসমানীনগরে দুই বোনকে নির্যাতন করে চুল কর্তন, মূল হোতা আটক

18

ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
ওসমানীনগরে পিতৃহীন কন্যা শিশুকে ধর্ষণের ঘটনার পর মামলা তুলে না নেয়ায় ভুক্তভোগী পরিবারের দুই শিশু কন্যাকে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে চুল কেটে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের খাসিয়াপাড়া খাগদিওর গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। দুই শিশুকে নির্যাতন করে এক শিশুর চুল কাটার অভিযোগে শনিবার রাতে আক্কাছ আলী নামের একজনকে আটক করে গতকাল রবিবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
নির্যাতিতার পরিবার ও স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ মার্চ খাসিয়াপাড়া খাগদিওর গ্রামের পিতৃহীন হত দরিদ্র পরিবারের ৬ বছরের কন্যাকে শিশু ধর্ষণ করে কটাই নামের এক লম্পট। কতিপয় প্রভাবশালী মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে শিশুর পরিবার যাতে আইনের আশ্রয় নিতে না পারে সেজন্য তারা নানা ফন্দি ফিকির করে। ঘটনার তিন দিন পর ২৬ মার্চ শিশুর মা হুছনা বেগম বাদি হয়ে কটাই মিয়াকে অভিযুক্ত করে ওসমানীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-১৬। কিন্তু ঘটনার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও ধর্ষক কটাই মিয়াকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গত শনিবার বিকেলে ধর্ষণের শিকার কন্যা শিশুর বোন তাছলিমা বেগম (১০) ও তার চাচাতো বোন রুসনা বেগম (১৩) গ্রামের শফিক মিয়ার পুত্র আক্কাছ মিয়ার বাড়ির নিকটে আম কুঁড়াতে যায়। তখন ধর্ষণের ঘটনার জের ধরে ধর্ষক কটাই মিয়ার সহযোগী আক্কাছ মিয়া ও তার স্বজনরা মিলে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে দুই শিশুকে ধাওয়া করে ধরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করেন। এসময় নির্যাতনকারীরা কাচি দিয়ে তাছলিমার চুল কেটে দেয়। খবর পেয়ে দুই শিশুর পরিবারের লোকজনসহ প্রতিবেশীরা সেখানে গেলে ধর্ষণ মামলা তুলে নেয়ার জন্য তাদেরকে হুমকি দেয়া হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা পুলিশের ভয় দেখিয়ে নির্যাতনকারীদের কবল থেকে দুই শিশুকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এই ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যার দিকে থানা পুলিশকে ঘটনাটি অবগত করা হলে রাতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার মূল হোতা আক্কাছ মিয়াকে আটক করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আক্কাছ মিয়া খাগদিয়র খাশিয়া পাড়া গ্রামের শফিক মিয়ার পুত্র। এ ঘটনায় ধর্ষণ মামলার বাদি হুছনা বেগম বাদি হয়ে শনিবার রাতে ওসমানীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-১৮। মামলায় আক্কাছ মিয়াসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার দুই শিশু খাগদিওর ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, ধর্ষণের ঘটনার ন্যায় এলাকার চিহ্নিত প্রভাবশালীরা শিশু নির্যাতনের ঘটনাটিকেও ধামাচাপা দিতে থানা পুলিশকে প্রভাবিত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ওই প্রভাবশালী মহল থানা পুলিশের কাছে ধর্না দিচ্ছে এবং বলে বেড়াচ্ছে ‘নির্যাতনকারী এবং নির্যাতনের শিকার দুই পক্ষই তাদের’ তাই তারা এবিষয়টি দেখবেন। এখানে থানা পুলিশের অহেতুক ঝামেলা করার দরকার কি?
নির্যাতনের শিকার শিশু দুই শিশুর মা হুছনা বেগম ও আয়রুন বেগম বলেন, আমরা অন্যের বাড়িতে ঝি’য়ের কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। আমাদের শিশু কন্যাকে ধর্ষণ করেছে প্রভাবশালী লম্পট কটাই। এঘটনায় মামলা করার পর মামলা তুলে নেয়ার জন্য আক্কাছসহ ও তাদের লোকজন আমাদেরকে চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। এমনকি আমাদেরকে পঞ্চায়েতের বাদ করেও রাখা হয়েছে। আমাদের অবুঝ দুই মেয়ে আক্কাছের বাড়ির পাশে আম কুঁড়াতে গেলে তাদেরকে ধরে নিয়ে মারধর করে চুল কেটে দেয়। আমরা মামলা করেছি তাই আমাদেরকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। পুলিশ সব সময় আমাদেরকে সহযোগীতা করে আসছে। এখন পুলিশী সহযোগিতা না পেলে আমাদেরকে গ্রাম থেকে বিতাড়িত হতে হবে।
ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার ওসি তদন্ত এসএম মাঈন উদ্দিন বলেন, ধর্ষক কটাইকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে ধর্ষণের ঘটনার রেশ ধরে কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা আমার জানা নেই।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম আল মামুন বলেন, মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে দুই শিশুকে নির্যাতন করে এক জনের চুল কর্তন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা নেয়া হয়েছে এবং মূল হোতা আক্কাছ মিয়াকে আটক করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার দুই শিশুর জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য সোমবার (আজ) আদালতে পাঠানো হবে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।