দেশে অগ্নিকান্ড রোধে পদক্ষেপ নিন

2

দেশে প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। ২০২১ সালে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২২ হাজার ২২২টি। যা ২০২০ চেয়ে ১ হাজার ৪৯টি বেশি। অর্থাৎ ১ বছরে বেড়েছে ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩ হাজার ৩৩০ কোটি ১৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বেশি। জীবনহানির ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৫৮০ জনের। অগ্নিদগ্ধ ও আহতের সংখ্যা ১১ হাজার ৯৯৯ জন। দেশে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা অপ্রতুল। রাজধানী ঢাকা ছাড়া আর কোথাও নেই পোড়া রোগীর চিকিৎসা। নতুন বছরের শুরুতেই গত ৩ দিনে শুধু ঢাকাতেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ৩টি। শনিবার কাপ্তানবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে মুরগির মার্কেট পুড়ে যাওয়াসহ নিহত হয়েছেন ১ জন। সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের উত্তর পাহাড়তলীর একটি আসবাবের কারখানায় অগ্নিকান্ডে নিহত হন ২ জন। ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি এ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপোর মতে, সারা দেশে প্রতিবছর অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। অথচ পোশাক শিল্প বাদে অন্যান্য শিল্প-কারখানা, বহুতল ভবন ও সুপার মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে। থাকলেও অপ্রতুল, অপর্যাপ্ত অথবা অকেজো। যানবাহন যেমন- লঞ্চ-স্টিমার, দূরপাল্লার বাস এমনকি ট্রেনেও অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা আশানুরূপ নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জরুরী নির্গমনের ব্যবস্থাও নেই। বেড়েই চলেছে অগ্নিকা-ের পরিমাণ। ফলে গণমাধ্যমসহ সর্বত্র ব্যাপক জনসেচতনামূলক কার্যক্রম গড়ে তোলা এবং পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা জরুরী ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অগ্নিদুর্ঘটনা যে মাত্রায় সংশ্লিষ্ট মানুষের জীবন আতঙ্কিত আর বিপর্যস্ত করে দেয়, এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় যাপিতজীবনের যে দুঃসহ চিত্র, তা সত্যিই এক অনাকাক্সিক্ষত আর অনভিপ্রেত ঘটনাপরম্পরা। প্রচন্ড ভিড়ে ফায়ার সার্ভিসের কাজেও অহেতুক বিলম্ব ঘটে। সবচেয়ে অসহনীয় পরিস্থিতির সূত্রপাত ঘটে যখন কোন ভবন কিংবা বস্তিতে আগুন ধরে যায়। উপস্থিত সঙ্কট মোকাবেলার চেয়েও বেশি দৃশ্যমান হয় দুর্ঘটনাটি নিয়ে হরেক রকম অসংলগ্ন আলোচনা। এমন দুঃসহ মুহূর্তে কিছু মানুষের যুক্তি বুদ্ধি ও ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। ফলে আগুন নেভানোর চেয়েও গুজব রটাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় কিছু মানুষকে। সেক্ষেত্রে সবার উচিত সাধ্য ও প্রয়োজন মতো অগ্নিনির্বাপণের পণ্য সামগ্রীকে আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে বৃহত্তর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রাখার ব্যবস্থা করা সচেতন দায়বদ্ধতা। দুর্ঘটনা দুর্বিপাক মোকাবেলা করেই মানুষের জীবন চলে। ফলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও সবার হাতের নাগালে থাকলে পরিস্থিতি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হবে না।