জয়নাল হাজারীর দাফন সম্পন্ন, বিদায় জানাতে লাখো মানুষের ঢল

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন হাজারীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ফেনী পাইলট হাইস্কুল মাঠে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
তার ইচ্ছানুযায়ী ফেনী জহিরিয়া মসজিদের খতিব মুফতি ইলিয়াস হোসেন জানাজায় ইমামতি করেন।
এর আগে ফেনী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারীকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। গার্ড অব অনার দেন ফেনী সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ ভূঁইয়া।
গার্ড অব অনার’র পর জয়নাল হাজারীর ইচ্ছানুযায়ী তার বাড়ি শৈল কুঠিরের মুজিব উদ্যানে তাকে সমাহিত করা হয়।
তার জানাযায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) নিজাম হাজারী, ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
স্মৃতিচারণ করেন করে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন (ভিপি), জয়নাল হাজারী ভাগিনা শাফায়েত হোসেন লিটু।
জানাযায় অংশ গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পর্যায় ও স্থানীয় নেতাকর্মীসহ ফেনীর সর্বস্তরের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
জয়নাল হাজারীর জীবন ছিল বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম, চড়াই-উৎরাই, আলোচনা-সমালোচনা এবং তর্ক-বিতর্কের। যদিও জীবনভর রাজনীতির উত্থান-পতন এবং নানা তর্ক-বিতর্কের মুখোমুখি হয়ে কাটাতে হয়েছে তাকে, তবে কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারেনি কখনোই।
জীবনভর কখনো ঘৃণা, কখনো আক্রোশের শিকার হয়েছেন, কখনো কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন, কখনো ঘর বাড়ি ছেড়ে দূরে পালিয়ে বেড়িয়েছেন, আবার কখনো নন্দিত হয়েছেন কারও কাছে।
২০০১ সালের পর থেকে আমৃত্যু নিজের সাজানো গোছানো মুজিব উদ্যান ছেড়ে দূরে থাকতে হয়েছে তাকে। কিন্তু ৭৬ বছর বয়সী রাজনীতিবিদ জয়নাল আবেদীন হাজারীর জীবনে যত ঝড়-তুফানই আসুক, কখনোই তিনি মুখ থুবড়ে পড়েননি।
সবকিছু সামলে ফের উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছেন, কখনো হার স্বীকার করেননি নিজের নীতি, আদর্শের কাছে।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ৫টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন জয়নাল হাজারী। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
জয়নাল হাজারী, যিনি ফেনীতে ‘ভাইছা’ হিসেবে এক নামে পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে শেষ হল ফেনীর রাজনীতির গোটা একটি অধ্যায়ের, যার নামের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভয়, কখনো ত্রাসের। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে ইচ্ছে পোষণ করতেন তিনি ফেনীতে ফেরার। কিন্তু নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি। শেষবার গত বছরের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করতে জীবিত অবস্থায় একবার ফেনী আসার ভাগ্য হয়েছিল তার। এবার সত্যি তিনিই ফেনী ফিরছেন, তবে জীবিত নয় নিথর দেহে।
তার মৃত্যুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শোক জানিয়েছেন। শোক প্রকাশ করেছেন ফেনী-২ আসনের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীও। বিবৃতিতে তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তারা।
সূত্র জানায়, জয়নাল হাজারী হৃদযন্ত্র, কিডনি ও ফুসফুস সংক্রমণে ভুগছিলেন। গত ১৫ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
দেশের একজন আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন জয়নাল হাজারী। ১৯৪৫ সালের ২৪ আগস্ট ফেনীর মাস্টারপাড়ায় সহদেবপুরে নানা হাবিবুল্লাহর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন জয়নাল হাজারী। তার বাবা গণি হাজারী ছিলেন পেশায় একজন ব্যবসায়ী, আর মা রিজিয়া বেগম ছিলেন গৃহিণী। জয়নাল হাজারী আজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একসময় ফেনীর গডফাদার নামেও পরিচিত ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত ছিলেন ফেনী-২ আসনের তিনবারের নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য।