কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের অর্থনীতি সচল রাখা, সামাজিক ও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে আবারও বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
এদিকে আগামী ১৯ আগষ্ট থেকে রাস্তায় শতভাগ গণপরিবহন ও বিনোদন এবং পর্যটন কেন্দ্রে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে অনুষ্ঠান চালু করা যাবে বলে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার তাগিদে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে আবারও বিধিনিষেধ দেয়া হবে। ফরহাদ হোসেন বলেন, দুটি কৌশলই আমরা অবলম্বন করব। একটা হলো বিধিনিষেধ বা লকডাউন, আরেকটি হচ্ছে ছেড়ে দেয়া। কিন্তু সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।
এদিকে ডেল্টা ধরনের প্রভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই মৃত্যু ও শনাক্ত বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, বুধবার দেশে ২৩৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৪২০ জন। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৩ হাজার ৩৯৮ জন।
গত কয়েকদিন ধরে নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার কিছুটা নিম্নমুখী অবস্থানে রয়েছে। বুধবার দেশে নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ছিল ২৩.৪৫ শতাংশ। মঙ্গলবার এই হার ছিল ২৩.৫৪ শতাংশ। সোমবার করোনা শনাক্তের হার ছিল ২৪.২৮ শতাংশ। রবিবার ছিল ২৪.৫২ শতাংশ, শনিবার এই হার ছিল ২৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ শুক্রবার হার ছিল ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, বৃহস্পতিবার ছিল ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। প্রতিদিনই নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে শনাক্তের হার কিছুটা হলেও কমছে। তবে আগের তুলনায় কমলেও গড় হার ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা শনাক্তের পর যে কোন সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোন দেশের নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে করোনা শনাক্তের ৫ শতাংশের কম হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে করা হয়ে থাকে। সেই হিসেবে বর্তমানে করোনা শনাক্তের হার আশঙ্কাজনক। করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে ফের লকডাউন দেবেন কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, পৃথিবীর যে কোন দেশে সংক্রমণ বাড়লেই, যেমন অস্ট্রেলিয়াতে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে, কারফিউ দেয়া হয়েছে, সেখানে লকডাউন দেয়া হয়েছে। আমেরিকাতেও দেয়া হয়েছে। দেয়া হচ্ছে কেন? কারণ এর কোন বিকল্প নেই।
ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে যাছিলাম। এক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বিভিন্নভাবে তাদের অপরিহার্যতা রয়েছে। তাদের প্রয়োজনের তাগিদেই সবকিছু খোলা হয়েছে। তাদের চাহিদা ছিল, এটা খোলা প্রয়োজন, ওটা খোলা প্রয়োজন, কারণ হচ্ছে ব্যবসা করে, কাজ করে, তাদের দিকে তাকিয়ে কিন্তু এ বিষয়গুলো শিথিল করা প্রয়োজন। যদিও পরিস্থিতি কিন্তু এখনও সন্তোষজনক নয়। সেটা (সংক্রমণ) ৫ ভাগের নিচে আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ধাপে-ধাপে বিধিনিষেধগুলো শিথিল করছি। তার ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার আরেকটি প্রজ্ঞাপন হয়েছে। ওই প্রজ্ঞাপনে পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র যে পরিমাণ আসন, তার অর্ধেক বা ৫০ ভাগ ব্যবহার চালু করতে বলা হয়েছে। সরকার বলেছে, আগামী ১৯ আগষ্ট থেকে যানবাহন শতভাগ চলবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই প্রত্যেকে সতর্কতার সঙ্গে তাদের পেশার কাজ করবেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করাটা কতটুকু বাস্তবসম্মত- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আমি অসতর্ক হলে আক্রান্ত হব। আর আক্রান্ত হলে আমার যদি শারীরিক কোন সমস্যা থাকে, আমার মৃত্যুর ঝুঁকি আছে, স্বাস্থ্যঝুঁকিও মারাত্মকভাবে আছে। সবার বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি হলে যেমন ছাতা নিয়ে বের হই, তেমনি করোনার এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, যাতে আক্রান্ত না হই।
১৯ আগষ্ট রাস্তায় চলবে সব গণপরিবহন : পর্যটন, রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্রে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠান করা যাবে বলে জানিয়ে বৃহস্পতিবার নতুন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে উল্লেখ করা হয়, আগামী ১৯ আগষ্ট থেকে রাস্তায় শতভাগ গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সড়ক, রেল ও নৌপথে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, যে কোন প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
করোনার সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে গত ১ জুলাই থেকে বিধিনিষেধ শুরু হয়। তবে ঈদ উপলক্ষে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। এরপর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আবারও বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করা হয়। পরে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ১০ আগষ্ট পর্যন্ত করা হয়।
অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ১১ আগষ্ট থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। এদিন মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চালু করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, সড়ক রেল ও নৌপথে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন/ যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সড়ক পথে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন (সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক) নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট দফতর/সংস্থা, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চালু করার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত এটিই বহাল রয়েছে।