কাজিরবাজার ডেস্ক :
ওমিক্রনকে এ যাবত আবিষ্কৃত করোনার সবচেয়ে ভয়াবহ ধরন আখ্যা দিয়েছে ব্রিটেন। ভারত ও শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের অন্তত ৩২ দেশে করোনার নতুন এ ধরন ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে আক্রান্ত বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। একইসঙ্গে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশগুলোর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা জোরদার ও জনগণকে সম্পূর্ণরূপে টিকাদানের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। শুক্রবার এক বিবৃতিতে ডব্লিউএইচও এসব তথ্য জানায়।
এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত ২৬ কোটি ৪৬ লাখ ১৩ হাজার ৯০৪ জন। মৃত্যু ৫২ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৭ জন। মোট সুস্থ ২৩ কোটি ৮৬ লাখ ৩১ হাজার ৭৯৭ জন।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক তাকেশি কাসাই ভার্চুয়াল এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুধু সীমান্ত বন্ধের মতো পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে হবে না। তিনি বলেন, উচ্চ সংক্রামক এই ধরনগুলো মোকাবেলায় আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে আমাদের পদ্ধতিগত কোন পরিবর্তন আনার প্রয়োজন নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ার কারণ খুঁজতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে দেশটি সফর করছে। সংস্থাটির আফ্রিকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আপদকালীন আঞ্চলিক প্রধান সালাম গুয়েইয়ে বলেছেন, ‘আমরা নজরদারি ও সমন্বয়ের কাজে সহযোগিতার জন্য একটি দল গাউতেং প্রদেশে পাঠিয়েছি। ইতোমধ্যেই আমরা সেখানে জিন সিকোয়েন্সিং-এর মাধ্যমে নয়া রূপটি চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু করেছি। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে ওমিক্রন ধরন সংক্রমণের বিষয়ে প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে রিপোর্ট করা হয় ২৪ নবেম্বর। কিন্তু সাম্প্রতিক তদন্তে জানা যায়, এর কিছুদিন আগেই বিভিন্ন দেশে ছড়াতে শুরু করে ওমিক্রন। ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন এ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি) বৃহস্পতিবার দাবি করে, আফ্রিকা মহাদেশের বোতসোয়ানায় প্রথম ওমিক্রন চিহ্নিত হয়েছিল ১১ নবেম্বর। এখন তা ৩২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অঞ্চল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ওমিক্রন রোগী ধরা পড়েছে ইউরোপে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলভুক্ত ২৭ দেশের মধ্যে ১৫টিতে এই ধরনের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় ওমিক্রনের হানা : অস্ট্রেলিয়ায় স্থানীয়ভাবে ওমিক্রন সংক্রমিত এক রোগী শনাক্ত হয়েছে। শুক্রবার অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিডনিতে এক স্কুলশিক্ষার্থী ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছে। দেশটিতে এর আগে বিদেশফেরতদের মধ্যে এ ধরন শনাক্ত হলেও স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। শুক্রবার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর বলেছে, প্রথমবারের মতো স্থানীয়ভাবে ওমিক্রনে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমিত হওয়ার আগে ওই শিক্ষার্থী বিদেশে ভ্রমণ করেনি কিংবা বিদেশফেরত কারও সংস্পর্শে আসেনি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে তদন্ত করছে স্বাস্থ্য দফতর।
মালয়েশিয়ায় ওমিক্রন শনাক্ত : মালয়েশিয়ায় প্রথমবারের মতো এক শিক্ষার্থীর শরীরে ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয়েছে। শুক্রবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়। শনাক্ত শিক্ষার্থী ১৯ নবেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মালয়েশিয়া আসেন। শুক্রবার দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী খাইরি জামালউদ্দিন এসব তথ্য জানান।
নেপালের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা : ওমিক্রন ধরন নিয়ে শঙ্কার মুখে ৯ দেশ থেকে ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নেপাল। শুক্রবার থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে।
এর আগে সোমবার নেপালের মন্ত্রী সভার বৈঠকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। মন্ত্রিসভার নির্দেশনা অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, জিম্বাবুইয়ে, নামিবিয়া, লেসোথো, ইসোয়াতিনি, মোজাম্বিক, মালাউয়ি ও হংকং থেকে কোন ভ্রমণকারী নেপালে প্রবেশ করতে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ফদিন্দ্রমণি পোখরেল নিশ্চিত করেন।
ফিনল্যান্ডে ওমিক্রন সংক্রমণ : প্রথম ওমিক্রনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ফিনল্যান্ডে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানায়। এর আগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যারা ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে গিয়েছিলেন। এবার ফিনল্যান্ড যার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, তিনি সুইডেন থেকে সেখানে গেছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যারা একই সঙ্গে সুইডেন থেকে ফিনল্যান্ডে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
ইউরোপের যে দেশগুলোয় ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তার একটি তালিকা দিয়েছে ইউরো নিউজ। তালিকা অনুযায়ী, জার্মানি, নরওয়ে, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, চেক প্রজাতন্ত্র, সুইডেন, সুইজারল্যান্ডের এ ধরন শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলভুক্ত ২৭টি দেশের মধ্যে ১৫টিতে ছড়িয়েছে এই ধরন। এ ছাড়া এই অঞ্চলের দেশ ব্রিটেনে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। পাশাপাশি ভারত, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, বতসোয়ানা, ঘানা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, হংকং, ইসরাইল, জাপান, নাইজিরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এ ধরন শনাক্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনে প্রথম করোনা ধরা পড়ে। এতে প্রায় ৫২ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।