বৈশি^ক বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা চাই

9

জলবায়ু সহায়ক প্রযুক্তির ওপর সমধিক গুরুত্ব দিয়ে শেষ হয়েছে আন্তর্জাতিক গ্লাসগো সম্মেলন কপ২৬। জলবায়ুর উষ্ণতায় কার্বন গ্যাস নিঃসরণ থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার বিপর্যয়ে পৃথিবীব্যাপী যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা সেটার তেমন কোন পথ নির্দেশিত হওয়া ছাড়াই সম্মেলনের যবনিকাপাত ঘটে। শিল্প বিপ্লবের নেতিবাচক দুঃসহ প্রতিক্রিয়ায় সারাবিশ্ব যে মাত্রায় উষ্ণতার কবলে আবর্তিত, তা বাসযোগ্য থাকার মতো নয়। এমন অভিমত প্রকৃতি বিশেষজ্ঞ ছাড়াও সারাবিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের কর্ণধারদেরও। কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপটে তার কোন যৌক্তিক সমাধান না আসাও জলবায়ু সঙ্কটের মতোই মহাবিপর্যয়। বিশেষ করে শিল্প বিকাশের আগ পর্যন্ত বৈশ্বিক উষ্ণতা যা ছিল, তার থেকে আর ১.৫ বাড়ানো সমীচীন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর জন্য সম্ভাব্য যা করণীয় তা হলো, কয়লা বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোই শুধু নয়, বরং ধাপে ধাপে নামিয়ে আনতে হবে শূন্যের কোঠায়।
শিল্প বিকাশের বিভিন্ন মাত্রায় শান্ত, সতেজ নিসর্গ ক্রমান্বয়ে তার পথ হারাতে বসেছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে চরম উষ্ণতা। যার নেতিবাচক প্রবাহে দাবানল, বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়া, খরা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাসের রুদ্র মূর্তির সঙ্গে লড়াই করা- সবই যেন প্রকৃতির প্রতিশোধ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর যে দুঃসহ বিপর্যয়, সেটাও উর্বর পলিমাটি আর নির্মল প্রকৃতির ওপর এক চরম আঘাত। আধুনিক শিল্পোন্নত পৃথিবীও আজ সচকিত এমন প্রাকৃতিক দুর্দশা থেকে মুক্তির আকাক্সক্ষায়। ১৯৯২ সাল থেকে এই বিপর্যয়ের ওপর সম্মেলন শুরু হলেও তার যথার্থ পথনির্দেশনা চিহ্নিত না হওয়ার বিড়ম্বনা কপ২৬ সম্মেলন পর্যন্ত ছিল এক রকম। একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের দোরগোড়ায় কপ২৬ সম্মেলনে জোটবদ্ধ উদাত্ত আহ্বান ধ্বনিত হলেও জলবায়ু বিশুদ্ধকরণে কতখানি কাজ দেবে সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে। মহাদুর্বিপাকে পড়া জলবায়ুর দুঃসহ চিত্রে সবাই একমত হলেও সমাধানের ক্ষেত্রে ঐকমত্যে না পৌঁছানোও চরম এক বৈশ্বিক বিড়ম্বনা।
এবারের সম্মেলনে ধাপে ধাপে কয়লাবিদ্যুৎ কমানোর ওপর যে সমঝোতা হয়েছে, সেটাও বাস্তবায়নে কত সময় লাগতে পারে তা নির্ণয় করা কঠিন। কারণ, সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। আরও দেরি করলে বায়ুম-লের উষ্ণতা কি মাত্রায় বাড়তে থাকবে, সেটাও চরম অশনি সঙ্কেত। কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে চীন-ভারতও অনেকাংশে নির্ভরশীল। শেষ অবধি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয় যে, ক্রমান্বয়ে কয়লা বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে এনে তা শূন্যের কোঠায় নিতে হবে।