কাজিরবাজার ডেস্ক :
সারাদেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারের ওপর নজরদারি ও প্রতিটি থানা এলাকায় বৈধ অস্ত্রের অবস্থান জানতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের রক্তক্ষয়ী সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারাভিযানের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতরকে। দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারকে (এসপি) এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে রক্তক্ষয়ী সহিংসতায় ২৫ জেলায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দফায় অনুষ্ঠিত হবে ৩ হাজার ৮৪৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার মতো হতাহতের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছে দেশব্যাপী।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার মধ্যরাত থেকে দেশের ৬৪ জেলায় শুরু হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের বিশেষ অভিযান। অভিযানের ব্যাপারে সার্বিক নির্দেশনা দিয়ে পুলিশ সদর দফতর থেকে সব জেলার এসপিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনাসহ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া হয়। প্রশিক্ষণ, নির্বাচনী মালামাল বিতরণ, ভোটগ্রহণ, ভোট গণনা, ফল প্রকাশসহ ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুচারুরূপে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, রবিবার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ভার্চুয়ালি সব জেলার পুলিশ সুপার ও ইউনিটপ্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে নির্বাচন ঘিরে মাঠ পর্যায়ের সার্বিক বিষয় আলোচনা হয়। যেসব এলাকায় সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে কী কী কারণ রয়েছে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তা জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া সামনে সহিংসতা রোধে করণীয় নিয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা মোকাবেলায় আগাম গোয়েন্দা তথ্য রাখার ওপর জোর দেন পুলিশের নীতিনির্ধারকরা। এছাড়া পুলিশের বিট অফিসারদের আরও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টিও সামনে আসে। সংশ্লিষ্ট বিটে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কারা উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে আগাম সেই তথ্য নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। নির্বাচন ঘিরে কী কী ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে মাঠ পর্যায় থেকে তা তুলে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই দিনে একযোগে এত বিপুলসংখ্যক এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় চাহিদা মাফিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই সুযোগে অনেক এলাকায় সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। নির্বাচনের ধাপ বাড়ানো গেলে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ভোটকেন্দ্রে নিয়োজন করা সম্ভব হতো। নির্বাচন ঘিরে বাড়তি ফোর্সের চাহিদা মেটাতে অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন ইউনিট থেকে পুলিশ পাঠানো হয়। ভিন্ন ইউনিট থেকে হঠাৎ নতুন এলাকায় গিয়ে পুলিশ সদস্যরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন না। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের দুই দফায় অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের রক্তক্ষয়ী সহিংসতায় ২৫ জেলায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, কক্সবাজার, মাগুরায় গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৮ জন। এছাড়া কক্সবাজারে পাঁচ, মাগুরায় চার, বরিশালে তিন এবং গাইবান্ধা, মেহেরপুর, কমিল্লা ও ঢাকার ধামরাইয়ে দুজন করে নিহত হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মার্চ থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত আট মাসে সারাদেশে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ২১০টি। এতে আহত হয়েছেন দুই হাজার ৫৪৩ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৪০ জন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, অস্ত্র উদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব এলাকায় গুলির ঘটনা ঘটেছে, সেসব এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র সম্পর্কে জানাতে চাওয়া হলে তিনি জানান, প্রতিবেদন পাওয়ার পর বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের বিষয়ে জানা যাবে।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন্স) হায়দার আলী খান বলেছেন, অস্ত্র উদ্ধার করতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তৃতীয় ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন রাখতে পুলিশের তরফ থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা আর একজনেরও প্রাণহানি চাই না।
নির্বাচন বিশ্লেকরা বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, প্রত্যাহার বাণিজ্য, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ইত্যাদিতে নজিরবিহীন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন, সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, ব্যালটে সিলমারা, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো, গুলিবর্ষণ, ধারাল অস্ত্রের আঘাতে হতাহতের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গত ৫০ বছরেও এ ধরনের নির্লিপ্ত ভোটের চিত্র কেউ দেখেনি। এবার দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ ও হামলায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের ব্যবহার হয়। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও কোন কোন জায়গায় পিস্তল ও রাইফেল ব্যবহার করে খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে।