আল-হেলাল সুনামগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার স্কুলছাত্রী হুমায়রা আক্তার মুন্নী খুনের মামলার একমাত্র আসামী এহিয়া সর্দারকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। বুধবার দুপুরে আদালতে এ দন্ডাদেশ ঘোষণা করেন সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ মো: ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার। কোর্ট ইন্সপেক্টর শিবেন্দ্র কুমার দাশ, এ রায়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে বিজ্ঞ আদালতের দন্ডাদেশ এর কপিসহ আসামীকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দিয়েছি। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ড. খায়রুল কবির রুমেন এডভোকেট। আসামী পক্ষে ছিলেন এডভোকেট হুমায়ূন মঞ্জুর চৌধুরী।
জানা যায়, গত ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাত ৮টার সময় দিরাই পৌর সদরের মাদানী মহল্লায় ঘরে ঢুকে স্কুলছাত্রী মুন্নীকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় কথিত প্রেমিক এহিয়া। আহতাবস্থায় তাকে সিলেটস্থ এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়। মুন্নী দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।
চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনার পরপরই দিরাই থানায় হত্যা মামলা নং ১০ তাং ১৮/১২/২০১৭ইং দায়ের করেন মুন্নীর মাতা রাহেলা বেগম। ২০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ২টায় সিলেটের জালালাবাদ থানার মাসুক বাজার এলাকা থেকে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ হাবিবুল্লাহ,দিরাই থানা সহকারী পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন শিকদার ও জালালাবাদ থানা ওসি শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫০ জন পুলিশের একটি বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে খুনী এহিয়াকে আটক করে। ঐদিনই ভোরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গ্রেফতারকৃত খুনী এহিয়াকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গ্রেফতারকৃত এহিয়া পুলিশের কাছে মুন্নীকে খুন করেছে মর্মে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। আত্মস্বীকৃত খুনী এহিয়া সর্দার উপজেলার সাকিতপুর গ্রামের সুদ ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন সরদারের বখাটে পুত্র। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জেলা পুলিশ সুপার মোঃ বরকতুল্লাহ খান এক সংবাদ সম্মেলনে এহিয়া আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন সুনামগঞ্জের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সারা দেশের মধ্যে সবসময়ই ভাল। আমরা কোনমতেই এ ঐতিহ্যকে ম্লান হতে দেবনা। যখন যেখানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে সেখানেই পুলিশের তৎপরতা তাৎক্ষণিকভাবে শুরু হবে। দিরাই থানা ওসি মোস্তফা কামাল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হত্যা মামলার প্রধান আসামী হিসেবে এহিয়াকে আদালতে প্রেরণ করেন। পরে দিরাই থানা এসআই সেকান্দর আলী বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
নিহত মুন্নী উপজেলার জগদল ইউনিয়নের নগদীপুর গ্রামের ইতালী প্রবাসী হিফজুর রহমানের কন্যা। দিরাই পৌরশহরের মাদানী মহল্লায় নানার বাসায় মা ও ছোট ভাই মাইদুল ইসলাম মাহদী (৯) সহ বসবাস করতো সে। ছেলেমেয়েদেরকে লেখাপড়া করানোর জন্য মা রাহেলা বেগম তাদেরকে শহরে পিতার বাসায় নিয়ে এসেছিলেন। ঘটনার দিন ঐ বাসার ভাড়াটে অন্য দুটি পরিবার বাসায় ছিলেননা। ফলে বাড়ীটি ছিল ফাঁকা। এই সুযোগেই বাসায় ঢুকে মুন্নীকে ছুরিকাঘাত করে বখাটে এহিয়া। মুন্নীর সহপাঠী ও শিক্ষকরা জানান,বছর খানেক আগে উপজেলার সাকিতপুর গ্রামের সুদ ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন সরদারের বখাটে পুত্র এহিয়া সর্দার মুন্নীকে উত্যেক্ত করতে শুরু করে। মুন্নীর স্বজনরা জানান, এহিয়ার যন্ত্রণায় ছয় মাস আগে থেকে ঘরে অনেকটা অবরুদ্ধ করে রাখা হয় মুন্নীকে। তবু বাসার পাশে গিয়ে প্রায়ই বখাটে এহিয়া তাকে উত্যেক্ত বিরক্ত করতো। হত্যাও তুলে নেয়ার হুমকি দিতো। থানা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় প্রায় ৩ মাস আগে র্যাবের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন মা রাহেলা বেগম। ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর বিষয়টি নিয়ে মা রাহেলা বেগম নিজের বাসায় সালিশও ডাকেন। সালিশে দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল, বখাটে এহিয়ার দুলাভাই তোফাজ্জল হক চৌধুরী ও রাহেলার আত্মীয় স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। সালিশে মুন্নীকে আর উত্যক্ত করবে না বলে লিখিত মুছলেকা দেয় এহিয়া। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এহিয়া নিজ গ্রামের কওমী মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতো। কয়েক বছর আগে মাদ্রাসা থেকে মোবাইল চুরির দায়ে সে বহিষ্কৃত হয়। এরপর গ্রামের মসজিদেও দানবাক্সের টাকাও চুরির অভিযোগও উঠে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় অনুষ্ঠিত সালিশে তার বাবা ক্ষমা চান। তিনি ছেলেকে বাড়ী হতে বের করে দেন। পরে দিরাই থানা সংলগ্ন সেন মার্কেটে জেডি সুজ দোকানে কর্মচারীর কাজ নেয় সে।