কাজিরবাজার ডেস্ক :
দুই বছর মেয়াদের কমিটির বয়স আড়াই বছর হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ কারণে সংগঠনটির সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনেকটাই ক্ষুব্ধ ৬০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বের প্রতি।
ফলে এবার কাউন্সিল ছাড়াই তিনি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সরাসরি ভোটে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামল। তাদের দায়িত্ব ছিল তিন মাসের মধ্যে দেশের সব ইউনিট কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া। কিন্তু তিন মাসের মাথায় ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর মাত্র ৬০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয় ওই নেতৃত্ব। এরপর ২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ করোনা রোগী শনাক্ত ও পরবর্তীতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দেড় বছর পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে পুনরায় মাঠে গড়ায় রাজনীতি। এই সময়ের মধ্যে ঘরোয়া কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশের জেলা ও সম পর্যায়ের অধিকাংশ কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয় খোকন-শ্যামল কমিটি। তবে তারা কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনিট শাখা কমিটি গঠন করতে পারেনি। এর মধ্যে ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)-সহ বেশ কিছু ইউনিট রয়েছে। কবে নাগাদ এসব কমিটি গঠন করতে পারবেন সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে পারেননি সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। এ কারণে পদপ্রত্যাশী অনেক নেতাকর্মী তাদের রাজনৈতিক পরিচয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হতাশায় ভুগছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, সারা জীবন ছাত্রদলের রাজনীতি করে কোনো পদ-পদবী না পেয়েই ছাত্রত্ব থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে?
জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবিতে পদপ্রত্যাশী নেতারা নানা রকম আন্দোলন করলেও কাজ হয়নি। এই সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদেরকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার জন্য বার বার তাগাদা দেন। তারপরও কেন্দ্রীয় নেতারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেননি। সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটিকে সময় দিয়েছিলেন তারেক রহমান। কিন্তু কমিটি দিতে না পারায় ১২ এপ্রিল ৬০ সদস্যের কমিটির মধ্যে সুপার ফাইভ-অর্থাৎ সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদককে বাদ দিয়ে বাকিদের সঙ্গে কথা বলেন তারেক রহমান। স্কাইপির মাধ্যমে ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির ৪৩ নেতার মতামত নেন তিনি।
এতে উপস্থিত ছিলেন, এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তারেক রহমান। একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে যারা মতামত দিয়েছেন তাদের অধিকাংশের দাবি ছিল নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার। যার দায়িত্ব তারেক রহমানকে দিয়েছেন তারা। সবার একই বক্তব্য ছিল, সাংগঠনিক অবিভাবক হিসেবে তারেক রহমান যে কমিটি দেবেন সেটা সবাই মেনে নেবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের কাউন্সিলের আগে ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসার জন্য যেসব যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল ২০০০ সালের পরে এসএসসি পাস হতে হবে। সে অনুযায়ী তিন বছর পার হয়ে যাওয়ায় এখন নতুন করে ২০০২ অথবা ২০০৩ সাল পর্যন্ত এসএসসি পাস হওয়ার বিষয়টি সামনে আসলে সুপার ফাইভের মধ্যে একমাত্র সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ছাড়া বাকিরা নেতৃত্বে আসার যোগ্যতা হারাবেন। কারণ তারা চারজনই ২০০২ সালের আগে এসএসসি পাস। সে অনুযায়ী নতুন কমিটিতে সভাপতি পদে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বর্তমান যুগ্ম-সম্পাদক তানজিল হাসান, শাহনেওয়াজ, মাহিন উদ্দিন রাজুর। আর সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান, নিজাম উদ্দিন রিপন, মারুফ এলাহী রনি, রনি প্রধান প্রমুখ।
জানতে চাইলে বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক তানজিল হাসান বলেন, যেহেতু ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হয় সে হিসেবে ২০২১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দুই বছর মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে জেলা ও সমমনা কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর কমিটি গঠন করতে না পারা আমাদের ব্যর্থতা। এর দায় ৬০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটির সবার ওপরেই বর্তায়। তবে যেহেতু একটি সংগঠনের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সে কারণে তাদের দায়িত্ব ও বেশি ব্যর্থতাও বেশি হবে।
তিনি বলেন, করোনাসহ নানা কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারায় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে কমিটি করাই ভাল বলে আমি মনে করি। এ বিষয়ে আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা সবাই তা মেনে নেব।