মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সে ব্যবসা করায় সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারের ভোজনবাড়ি, পানসী ও পাঁচ ভাই রেস্তোরাঁয় সম্প্রতি অভিযান চালানো হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা করা হয়েছে। এই অভিযানের পরপরই সিলেট বিভাগের চার জেলা সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও হবিগঞ্জের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও ভোক্তাদের নানা অভিযোগের বিষয় নতুন করে আলোচনায় আসে। ইতোমধ্যে সিলেটে ব্যাপক আলোচনার জন্মদিয়েছে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অনেকেই কোন হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশপাশি প্রতারণার শিকার হলে দ্রুত অভিযোগ দায়ের করছেন ভোক্তা অধিদপ্তরে। অভিযোগ দায়ের কয়েকদিনের মধ্যে তা সুরাহা করা হয়। অভিযোগকারীর অভিযোগ শুনানীকালে প্রমাডুত হলে অভিযোগকারীও জরিমানা থেকে অংশ পাচ্ছেন সরকারি এই প্রতিষ্ঠান থেকে।
এদিকে ভোক্তা অধিকার আইনে সিলেট চেম্বার সভাপতিসহ ১৩ জনের বিরেুদ্ধে মামলা করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। বুধবার (৩ নভেম্বর) র্যাব-৯ এর সহকারি পরিচালক (ডিএডি) সিরাজুল ইসলাম বাদি হয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে মামলা দায়ের করেন। এতে সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি টিএম শোয়েবসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম। তিনি জানান, ভোক্তা অধিকার আইন দেশের সবচেয়ে জনবান্ধব ও কল্যাণকর একটি আইন, যা একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। এ আইনটি সব মানুষকে প্রতিনিয়ত স্পর্শ করে। সিলেটের মানুষের আস্থা অর্জন করতে ইতোমধ্যে সক্ষম হয়েছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিদিনই সিলেট বিভাগে চলছে ভোক্তার অভিযান ও জরিমানা। অভিযানে বেশ সফলতাও এসেছে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিয়মিত বাজার অভিযানের কারণে অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দৃশ্যমান স্থানে পণ্য/সেবার মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখা নিশ্চিত হয়েছে। এখনো যাঁরা মূল্যতালিকা প্রদর্শন করেন না, তাঁদের জরিমানার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। বর্তমানে এ ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষণীয়।
তিনি বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অনেকেই অভিযোগ করে সফল হয়েছেন। আমরা প্রতিটি অভিযোগ গরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করে থাকি। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে মোট ৩৪৮টি অভিযোগ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৪২টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট অভিযোগের ৯৮ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অপরাধ প্রমাডুত হওয়ায় মোট ৩ লাখ ১১ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়, যার ২৫ শতাংশ হিসেবে ৭৭ হাজার ৯৫০ টাকা মোট ৬৮ জন অভিযোগকারীকে প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সিলেট বিভাগ ও এর আওতাধীন জেলাগুলোতে মোট ৯০৫টি বাজার অভিযান পরিচালিত হয়। এর মধ্যে সিলেট নগরে ১৮৯টি, সিলেট জেলায় ১৭৮টি, হবিগঞ্জে ১৮৫টি, সুনামগঞ্জে ১৬৯টি ও মৌলভীবাজারে ১৮৪টি অভিযান পরিচালিত হয়। চলতি অর্থবছরেও তদারকি কার্যক্রম ও অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের হোটেল-রেস্তোরাঁ, খাদ্য প্রস্তুতকারী বেকারি, মিষ্টির দোকান, ওষুধের দোকান, সিএনজি ও পেট্রলপাম্প, ইটভাটা, ভেজাল মসলার কারখানা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের খুচরা ও পাইকারি বাজার, মুদিদোকান, কাঁচাবাজার, প্রসাধন সামগ্রীর দোকানসহ ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনের আওতাধীন বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিযান অব্যাহত আছে। (খবর সংবাদদাতার)