স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট মহানগরীর রাস্তা সম্প্রসারণ, রোড ডিভাইডারে সড়ক বাতি, সৌন্দর্য বর্ধনসহ উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে সড়কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দুই মন্ত্রী।
সিলেটে এসে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিদর্শনের অংশ হিসেবে প্রথমেই উপশহরের মেন্দিবাগস্থ জেলা পরিষদ বিপণি বিতানের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এ সময় দুই মন্ত্রীকে নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ঘুরিয়ে দেখান। সিলেটের উন্নয়ন দেখে মুগ্ধ হন দ্ইু মন্ত্রী। নগরীর শাহজালার উপশহর হলদি ছড়ার ড্রেন, রিটেইনিং ওয়াল, ওয়াকওয়েসহ সৌন্দর্যবর্ধন কাজ পরিদর্শন ছাড়াও মানিকপীর কবস্থানের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন তারা।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরী ৮৬০ মিটার রাস্তার উন্নয়ন, ১ হাজার ৬৮০ মিটার রাস্তার উভয় পাশে ফুটপাতসহ ড্রেন নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধন কাঠামোসহ রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা হয়।
গতকাল প্রকল্পের উদ্বোধনকালে অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও খাদিমপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট আফসর আহমদ, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ ও বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের উন্নয়নকাজও পরিদর্শন করেন দুই মন্ত্রী।
এদিকে সিলেটের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শুক্রবার বিকেলে সিলেট সিটি করপোরেশন আয়োজিত উন্নয়ন অগ্রযাত্রা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ মুগ্ধতা প্রকাশ করেন তাঁরা।
নগরীর একটি হোটেলের হলরুমে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সভার শুরুতে সিলেট নগরীর উন্নয়ন নিয়ে তিনি নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
এর আগে দিনভর সিলেট নগরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিদর্শন করেন দুই মন্ত্রী। এরপর মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট নগরের উন্নয়ন নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, এমন কাজ যা জনগণের জন্য, যা বাংলাদেশের জন্য, আমিও তার সহযাত্রী হতে চাই। এসময় তিনি টেকসই উন্নয়নে মনোযোগী হওয়ার জন্য আহবান জানান। তিনি বলেন, মেয়র যে কাজ করছেন তাতে আমার পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে আমি তার উন্নয়ন কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশ এখন আর দরিদ্র নয়, আমাদের মাথাপিছু আয় এখন যে কোনো দেশের তুলনায় ঈর্ষণীয় গতিতে বাড়ছে। আমাদের জনসংখ্যা সম্পদে পরিণত হয়েছে। দেশে শিল্প বাড়ছে, বাড়ছে কর্মসংস্থান। উন্নয়নে সবাইকে একসাথে কাজ করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, কে কোন দল করেন তা মুখ্য নয়, আমাদের দেশের জন্য কাজ করতে হবে। আর দেশের স্বার্থে আমরা সবাই একতাবদ্ধ থাকতে বদ্ধপরিকর।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সিলেট নগরী খেলার মাঠের স্বল্পতা রয়েছে। আমাদের আরও কিছু মাঠ প্রয়োজন। মাঠের স্বল্পতা নিরসনের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
সভার শুরুতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক তাঁর উন্নয়ন বিষয়ক নানা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। যার মধ্যে অন্যতম সিলেট নগরীর লালাদীঘিরপার এলাকায় প্রায় ১৫ একর জায়গা নিয়ে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স। এই প্রকল্পের ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করেন স্থপতি ও নির্মাতা শাকুর মজিদ। ভিডিওচিত্রে প্রকল্পের নানা দিক তুলে ধরেন তিনি। তিনি জানান, এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন, ৭ মার্চের ভাষণ, সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরা হবে বিভিন্ন স্থাপত্যের মাধ্যমে। যেখানে নগরবাসীর বিনোদন ও কেনাকাটার ব্যবস্থা থাকবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সিলেট জেলা বিভাগীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শুক্রবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সিলেটে এসে পৌঁছান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় সিলেট সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিমানবন্দরে তাঁদের অভ্যর্থনা জানান।
উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন : সকালে সিলেটে আসার পর দিনভর দুই মন্ত্রীকে নগরের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ ঘুরিয়ে দেখান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। দুপুরে দুই মন্ত্রী যান সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের আধুনিকায়ন কাজ পরিদর্শনে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে চলমান কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের আধুনিকায়ন কাজ পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নগরীর উপশহরস্থ হলদিছড়ার ড্রেন, রিটেইনিং ওয়াল, ওয়াকওয়েসহ সৌন্দর্যবর্ধন কাজ পরিদর্শন করেন। পরে মন্ত্রীদ্বয় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মানিকপীর কবস্থানের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন। এ সময় সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কাউন্সিলরগণ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
চৌহাট্টা-বন্দরবাজার সড়ক সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন : শুক্রবার বিকেলে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা থেকে বন্দরবাজার পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণ, দৃষ্টিনন্দন ডিভাইডার ও ফুটপাত নির্মাণ এবং সড়কবাতি স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এসময় সিলেট সিটি করেপারেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও তাঁদের সাথে উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) এই সড়কটির সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করে। যা ইতোমধ্যে নগরবাসীর দৃষ্টি কেড়েছে। এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ৮৬০ মিটার সড়ক এসফল্ট দ্বারা উন্নয়ন, সড়কের উভয় পাশে ফুটপাতসহ ১৬৮ মিটার ড্রেন নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধন কাঠামোসহ ১০৬০ মিটার রোড ডিভাইডার স্থাপন, ৬২টি সড়কবাতি ও ৩০টি বৈদ্যুতিক পোল স্থাপন করা হচ্ছে।
এসময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।