কাজিরবাজার ডেস্ক :
একদিকে সাপ্তাহিক ছুটি। তার ওপর ধর্মঘট। এ অবস্থায় হঠাৎ চাপ বেড়েছে আকাশ ও রেলপথে। যারা সচরাচর প্লেনে চড়েন না- তারাও এবার দায়ে ঠেকে চড়া দামে টিকিট কিনে প্লেনে গন্তব্যে গেছেন। একই অবস্থা রেলপথেও। দুদিন ধরে কমলাপুরে দেখা গেছে টিকিটেরহাহাকার। বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে নারী-পুরুষকে টিকিটের জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ছয় ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেও টিকিট না পেয়ে এক যুবককে প্রকাশ্যেই রেল কর্তৃপক্ষকে গালিগালাজ করতে দেখা গেছে।
বিমান ও রেলসূত্র জানিয়েছে- এমনিতেই শুক্র ও শনিবার যানবাহন চলাচল করেনি। সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ দুদিন সড়কপথে যান চলাচল না করায় চাপ বেড়েছে আকাশ ও রেলপথে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে গত দুদিন ১০ ভাগ যাত্রী বেশি যাচ্ছেন আকাশপথে। অনেক ফ্লাইটের টিকিটও মিলছে না। বাংলাদেশের বেসরকারী এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, এমনিতেই বৃহস্পতি শুক্র ও শনিবারে ফ্লাইটে যাত্রী বেশি থাকেন। কিছুসংখ্যক সিট ফাঁকা থাকে। তবে সড়কপথে যেতে না পারায় অনেকেই প্লেনে গন্তব্যে ফিরছে। এ কারণে আকাশপথের প্রায় সব টিকিটই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তারা জানায়, এই তিন দিন মূলত কক্সবাজার ও সিলেটের টিকিটের চাপ একটু বেশি থাকে। তবে এই সপ্তাহে প্রতিটি রুটের টিকিটই প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এ বিষয়ে বিমানের মহাব্যবস্থাপক সালাহউদ্দিন বলেন, টিকিটের চাপ এ দুদিনে একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে। প্রয়োজনেই মানুষ ছুটছে আকাশপথে। একই মন্তব্য করে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, অনেকে বাড়ি ফেরার জন্য শুক্র-শনিবারকে বেছে নেন। সপ্তাহের এই দিনগুলোতে যাত্রীর চাপ একটু বেশি থাকে। তবে ধর্মঘটের মধ্যে জরুরী প্রয়োজনে গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেকেই টিকিটের জন্য যোগাযোগ করছেন। ফলে প্রতি রুটেই যাত্রী বেড়েছে। নভোএয়ারের হেড অব সেলস এ্যান্ড মার্কেটিং মেসবাহ উল ইসলাম বলেনÑ শুক্র-শনিবারে এমনিতেই ট্রাফিক হাই থাকে। তবে ধর্মঘটের কারণে সব রুটেই ৫-১০ ভাগ যাত্রী বেড়েছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, বরিশাল ও রাজশাহী রুটে প্রতিদিন প্রায় ১১০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
দুপুরে কমলাপুর গিয়ে দেখা যায়, এত কঠিন সময়ে দূরপাল্লার যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে এখন শেষ ভরসা ট্রেন। তাই অন্য সময়ের তুলনায় রেলস্টেশনে বেড়েছে ভিড়। তবে এমন পরিস্থিতিতে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার জানিয়েছেন-যাত্রীর যত চাপই হোক, আমরা সাধ্যমতো সেবা দেব। দুপুরে কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা যায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের যেন দাঁড়ানোর জায়গা নেই। স্টেশনে আসা নাসিম নামে এক যাত্রী জানান, আমি শ্রীমঙ্গলে চাকরি করি। মা অসুস্থ থাকায় তাকে দেখতে ঢাকায় এসেছিলাম। গতকাল ফেরার কথা থাকলেও ধর্মঘটের কারণে যেতে পারিনি। রবিবার অফিসে উপস্থিত থাকতেই হবে। তাই আজ বাধ্য হয়ে স্টেশনে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটেছি। তার মতোই চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন রাবেয়া। স্টেশনের বাইরে তার সঙ্গে কথা হয়। রাবেয়া বলেন, আমার হাঁটুতে ব্যথা। ঢাকায় এসেছিলাম চিকিৎসার জন্য। এখনও টিকিট পাইনি। স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে যেতে হবে। টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের কাছে যে টিকিট ছিল ইতোমধ্যে তা শেষ হয়ে গেছে। এখন স্ট্যান্ডিং টিকিট দেয়া হচ্ছে। স্টেশনের প্রবেশপথে রেলের প্রায় সাত জনকে দেখা গেছে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করতে। এদের মধ্যে একজন জানান, গণপরিবহন বন্ধ, মানুষ যেভাবেই হোক গ্রামে যাবে। আমরা অতিরিক্ত টিকিট দিচ্ছি। মানুষ যেহেতু যাবেই, তাহলে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে যাক। একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন- কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ভৈরবে যাওয়া আব্দুল আজিজ নাসের। বলেন, মেয়েকে নিয়ে ঢাকা এসেছিলাম। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সব জায়গায় সমস্যায় পড়েছি। দেড়শ টাকার সিএনজি অটোরিক্সার ভাড়া ২৬০ টাকা দিয়ে এলাম। এখানে এসে দেখি টিকিট নেই। কীভাবে যাব। স্ট্যান্ডিং টিকিটও দিচ্ছে না। কেউ কথা বলছে না। কী একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা। আব্দুল আজিজের মতো শত শত যাত্রী গন্তব্যে পৌঁছাতে শেষ ভরসা হিসেবে রেলস্টেশনে এসে টিকিট না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন। কেউ কেউ টিকিট না পেয়ে স্ট্যান্ডিং টিকিটকে সোনার হরিণ মনে করছেন। স্টেশনে বাইরে থাকা হালিমা নামের এক যাত্রী বলেন, কিশোরগঞ্জ যাব, টিকিট পাইনি। অনেক কষ্টে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটেছি। আমি অসুস্থ, দাঁড়িয়ে কীভাবে যাব চিন্তায় আছি।
এ বিষয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা টিকিট বিক্রির জন্য এখানে বসে আছি। সকাল থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট দেয়া হয়েছে, এখনও দেয়া হচ্ছে। তবে ট্রেনের যে ধারণ ক্ষমতা আছে এর বাইরে তো যাত্রী নেয়া যাবে না। জানতে চাইলে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে স্টেশনে যাত্রীদের চাপ। স্বাভাবিক দিনের তুলনায় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ যাত্রী। তবে যাত্রীদের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে ২২টি অতিরিক্ত কোচ দেয়া হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। যত যাত্রীর চাপই হোক, আমরা সেবা দিয়ে যাব। অনেকে টিকিট পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে স্টেশন ম্যানেজার বলেন, ইতোমধ্যে সব রুটের টিকিট বিক্রি শেষ। আমরা এখন স্ট্যান্ডিং টিকিট দিচ্ছি। বাড়তি বগি যুক্ত করা হয়েছে। তবে আমাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।