ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অন্যদিকে ইতিহাসের নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ঘাতক দল। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্রাক নামল রাস্তায়। ভোরের সূর্য উঠার আগেই রক্তে লাল হয়ে যায় ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। রাতের শেষ ভাগে রক্ত নেশায় পাগল দানবের দল। বাঙালি জাতির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর গভীর ভালবাসা চিরতরে অবসান ঘটায়।
আজ পনেরো আগষ্ট ১৯৭৫ সালের আজকের দিনে একটি বিয়োগান্ত ঘটনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। তাকে হত্যা করা হলেও তার আদর্শ নীতি ও সাহসিকতা তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত। রাজনৈতিক পরিমন্ডলে তিনি প্রসারিত। একটি শিশু যখন বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করতে শিখে তখন জেনে নেয় এদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে ঘাতকরা হত্যা করেছে। যে প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে দেখে নাই, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে নাই। সেই প্রজন্মের নিকট বঙ্গবন্ধু বহমান।
বঙ্গবন্ধু বাঙালি ও অবাঙালি সবার নিকট অধিকার আদায়ের এক কিংবদন্তি মডেল। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক জীবনটাই ছিল জ্যোতির্ময় আলো দিয়ে উদ্ভাসিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এক সূত্রে লেখা। ইহাতে কারো সন্দেহ নেই। এর একটি শব্দ আরেকটি শব্দের পরিপূরক এবং জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল এক অচিন্তিত পূর্ব কালান্তরের সূচনা। তিনি রাজনৈতিক পারদর্শিতায় সাহস ও শক্তির সাথে বাংলার পথ প্রদর্শক ছিলেন। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী বলেই এর আবিষ্কারক বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করে। অনুপ্রাণিত হয় তার আপোষহীন বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কাছে।
দুই.
একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য একটি প্রজাতন্ত্র হবে গণতন্ত্র। প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক হবে জনগণ। যেখানে নিশ্চিত হবে মৌলিক মানবাধিকার। আর এই চেতনার উন্মেষ ঘটাতে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এদেশের মানুষকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র সৃষ্টি করার জন্য আহ্বান করে একত্রিত করেছেন। ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই ত্যাগ নিষ্ঠা ও সাহসী নেতৃত্ব এই প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে। আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা বাংলায় জাগ্রত। তাঁর নাম সম্মানের সাথে উচ্চারিত হয়। শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয় তার প্রতিটি কাজ।
আগষ্ট মাস মানেই শোকাবহ। পঁচাত্তোর মানে কালো অধ্যায়। এই দিনকে স্মরণ করেই আমরা বিশ্বাস করি জনক মুজিব বাংলায় আমৃত্য। জনক মুজিবই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।
তিনি আমাদের কাছে অমর হয়ে আছেন। শেখ মুজিবের দেহ নিথর হয়ে চলে গেলেও তাঁর আদর্শ অম্লান হয়ে থাকবে এই বাংলায়। তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর স্মৃতি প্রতিটি এলাকায় জড়িয়ে আছে। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার হৃদয়ে তাঁর স্মৃতি দাবানলের মতো জ্বলজ্বল করে। তিনি হিমালয়ের মতো বিশাল ছিলেন। তাকে মুছে দেওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু ধ্র“ব তারার মতো জ্বলে জ্বলে রবে সব বাঙালির বুকে। ঘাতকরা জানতনা মুজিব কখনো মরে না। মুজিব জেগে থাকে অমর হয়ে মুক্তির নেশায়।
তিন.
বঙ্গবন্ধু শুধু রাজনীতির একটি অংশ নয়। পঁচাত্তোর পনেরো আগস্ট তাকে নিয়ে ইতিহাস রচনার কোনো অধ্যায় নয়। তিনি বাংলা সাহিত্যের একটি অংশ। তাকে নিয়ে বাংলা সাহিত্য একটি বিশাল স্থান দখল করে আছে। কবিতা গল্পে উপন্যাসে বঙ্গবন্ধুর স্থির ছবি জানান দেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই কিংবদন্তি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হয় না।
আজ মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাসবেত্তার মহানায়কের নেতৃত্বকে মূল্যায়ন করে তরুণ প্রজন্ম সাহিত্য রচনা করে। সাহিত্য দর্শনে বঙ্গবন্ধু- “চারিদিকে আজ রক্ত গঙ্গা/অশ্র“ গঙ্গা বহমান। নেই নেই ভয় হবে হবে জয়/জয় শেখ মুজিবুর রহমান।”
“এই বাংলায় আকাশ বাতাস/সাগর গিরি ও নদী ডাকিছে তোমারে/বঙ্গবন্ধু আবার আসিতে যদি।”
“সেই কবিতাটি লিখা হয় নাই/লিখবেন কোন কবি/সেই কবিতাটি কবিতা তো নয়/মুজিবের মুখোচ্ছবি।”
“শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে/রবীন্দ্রনাথের মতো দীপ্ত পায়ে হেঁটে/অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন/শুনালেন তাঁর অমর কবিতা।….”
আমাদের কাছে এই হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।