শিশু শিক্ষার্থীদের টিকাদান আজ শুরু ॥ বিশাল কর্মযজ্ঞ উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্বের গুটিকয়েক উন্নত দেশ যখন শিশু শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচী শুরু করেছিল তখনও টিকার সঙ্কটে নাভিশ্বাস উঠেছিল বাংলাদেশের। এরকম সময়ে শিশু শিক্ষার্থী তো দূরে থাক প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকাদান কর্মসূচীও পড়েছিলো হুমকির মুখে। কিন্তু সরকারের নানামুখী কূটনৈতিক তৎপরতার সফল বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতে টিকাদান কর্মসূচী দিন দিন ত্বরান্বিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতা আজ থেকে দেশে শুরু হতে যাচ্ছে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচী। জন্মনিবন্ধের মাধ্যমে টিকার আওতায় আনা হবে এসব শিক্ষার্থীদের। আজ রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রে এ বিশাল কর্মযজ্ঞের উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়, প্রথম দিন উদ্বোধনের পরদিন থেকে রাজধানীর মোট আটটি কেন্দ্রে প্রতিদিন ৪ হাজার শিক্ষার্থী করে মোট ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া শুরু হবে। প্রতিদিন একটি কক্ষে ২০০ শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া হবে।
প্রথম দফায় ১২টি কেন্দ্রে টিকা দেয়ার কথা বলা হলেও পরবর্তীতে জানানো হয় প্রতিদিন ৮টি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে জানিয়ে ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মোঃ শামসুল হক বলেন, প্রথম দিন (আজ) একটি কেন্দ্রে টিকা দিয়ে এ কর্মসূচীর শুরু হবে। ফাইজার ভ্যাকসিনটি তাপমাত্রা সংবেদনশীল। যে কেন্দ্র, যে বুথে এই টিকা দিতে হয় সেটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হতে হয়। এই ভ্যাকসিন তৈরি করা জন্য যে ডায়ালুয়েন্ট লাগে সেটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখতে হয়। এই দুটি বিষয় বিবেচনা করে যেখানে আমাদের এই সুযোগ আছে সেই স্কুলগুলোকে নির্বাচন করা হয়েছে টিকা দেয়ার জন্য। তাই যে আটটি কেন্দ্র নির্বাচন করা হয়েছে সেখানে তারা নিজেদের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আশপাশের নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে পারবেন। এসব কেন্দ্রে ২৫টি বুথ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো, প্রতদিন যেন একেকটি কেন্দ্রে ৪ থেকে ৫ হাজার শিশুকে আমরা টিকা দিতে পারি। তিনি বলেন, এ উদ্দেশে আমরা অনেকগুলো স্কুলের তালিকা চেয়েছিলাম, কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর বলছে প্রাথমিকভাবে ২৫টি করে বুথ করা যায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থপনা রয়েছে, এমন মোট আটটি স্কুলের তালিকা দেয়া হয়েছে। তবে পরবর্তীতে এই কার্যক্রমকে ঢাকা শহরসহ আরও প্রায় ২২টি জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচী শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে প্রতিটি জেলায় এই কর্মসূচী সম্প্রসারিত করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
রবিবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আয়োজিত নিয়মিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে মোঃ শামসুল হক আরও জানান, জন্মনিবন্ধন ব্যবহার করে টিকা কর্মসূচীর আওতায় আসবে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা। আর টিকা নেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের টিকা কার্ড এবং জন্মনিবন্ধন নিয়ে টিকা কেন্দ্রে আসতে হবে। তিনি বলেছেন, যেহেতু এই শিশুদের এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) নেই, তারা জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে এ তালিকায় (টিকাদান কর্মসূচী) অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। তিনি জানান, সকাল সাড়ে নয়টায় এ কার্যক্রমে উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। তিনি বলেন, এই কার্যক্রমে এমন স্কুলগুলোকে নির্ধারণ করা হয়েছে যেখানে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ছাড়াও তার আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে পারবে।
ডাঃ শামসুল হক বলেন, যেহেতু শিক্ষার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাই জন্মনিবন্ধন ব্যবহার করে তারা নিবন্ধনের আওতায় আসবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জন্মনিবন্ধনের তালিকা আইসিটি বিভাগকে পাঠাবে। আইসিটি বিভাগ হোয়াইট লিস্টিং করে, সঠিক করে দেখে আমাদের সুরক্ষা ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবে। তখন প্রতিটি অভিভাবক অথবা স্কুল কর্তৃপক্ষ সুরক্ষার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করবে। আর শিশুটি যেদিন টিকা নেবে সেদিন তার নিবন্ধন কার্ড এবং জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি নিয়ে স্কুলে আসতে হবে, রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোন টিকা দেয়া হবে না। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকা নিলে আমরা তাদের সার্টিফিকেট দিতে পারব না। তবে এখানে স্কুলও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে জানিয়ে তিনি বলেন, স্কুলে যখন টিকা কার্যক্রম চলবে তখন সেখানে টিকাদানকারীসহ প্রতিটি স্কুলে ডাক্তার থাকবেন। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে সবাইকে স্কুলে ভিড় না করার জন্য অনুরোধ করেছেন ডাঃ শামসুল হক।
এদিকে রবিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, শিশুদের টিকা দেয়ার জন্য প্রথমে ১২টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় চারটি বাতিল করা হয়েছে। ফলে (আজ) থেকে ৮টি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেয়া হবে। এই কেন্দ্রগুলো হলো হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাউথপয়েন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজ, চিটাগং গ্রামার স্কুল, মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, মিরপুর কমার্স স্কুল এ্যান্ড কলেজ, কাকলী হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজ, সাউথ ব্রিজ স্কুল এবং মিরপুরের স্কলাস্টিকা স্কুল।
এর আগে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ দিকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের তালিকা পাওয়ার পর আইসিটি মন্ত্রণালয়কে নিবন্ধনের জন্য দেয়া হয়েছে। সুরক্ষা এ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধন করে দেয়া হয়েছে। নিবন্ধনের বাকিটা স্কুল থেকে করা হবে। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতি দিন ৪০ হাজার শিশুকে টিকা দিতে পারবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ফাইজারের এই টিকা সংরক্ষণ করতে হয় হিমাঙ্কের নিচে মাইনাস ৯০ ডিগ্রী থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে। ফলে এই টিকা সংরক্ষণে আল্ট্রা কোল্ড ফ্রিজারের প্রয়োজন হয়। আর পরিবহনের জন্য প্রয়োজন হয় থার্মাল শিপিং কনটেইনার বা আল্ট্রা ফ্রিজার ভ্যান। ফলে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসি রুম রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। যাচাই-বাছাই করে রাজধানীতে ৮ থেকে ১২টি কেন্দ্র নির্ধারণ করে টিকা দেয়া হবে।
এর আগে গত ২৭ অক্টোবর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ঢাকায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের টিকা দেয়ার জন্য কয়েকটি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। পরে প্রতিটি জেলায় শিশুদের টিকা দেয়া হবে। সেজন্য যেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ নেই, সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।
এদিকে টিকাদান কর্মসূচীর উদ্বোধনীকে সামনে রেখে সাজানো হচ্ছে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজকে। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ শাহান আর বেগম বলেন, কলেজের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ২০টি কক্ষ। এসব কক্ষসহ পুরো প্রতিষ্ঠানটিকে পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে। (রবিবার) বিকেলের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের ১২০ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়। তাদের শরীরে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হওয়ায় ব্যাপকভাবে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচী শুরু করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।