করোনাকালে উন্নত সব দেশ যেখানে অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে পারেনি, সেখানে নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশের অর্জন ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়। উন্নয়নই সরকারের মূলমন্ত্র। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেল’। ‘বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২১’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি সুনির্দিষ্টভাবেই বলেছেন কোন্ কোন্ দেশে কি কি পণ্যের চাহিদা রয়েছে সেটা অনুধাবন করে সেই পণ্য যেন উৎপাদন করতে পারি। বর্তমান সরকার দেশের সড়কপথ, নৌপথ, রেলপথ এবং আকাশপথ-যোগাযোগর সব মাধ্যমকে উন্নত করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে। তাই যারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসবেন তারা লাভবানই হবেন। দক্ষিণ এশিয়ার এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাজার ধরার এবং রফতানি করার বাড়তি সুযোগ তারা কাজে লাগাতে পারবেন। অর্থাৎ বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে তারা আশপাশের দেশগুলোয়ও বাণিজ্য বিস্তার ও বিনিয়োগের সুবিধা গ্রহণে সক্ষম হবেন। সাতদিনের এই সম্মেলন আমাদের দেশের জন্য সম্ভাবনাময় ৯টি খাত- অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ও ফিনটেক, চামড়া, ওষুধ, স্বয়ংক্রিয় ও ক্ষুদ্র প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট-বস্ত্র শিল্পসহ অতি চাহিদাসম্পন্ন ভোগ্যপণ্য উৎপাদন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসাকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করেছে যা সময়োপযোগী।
করোনায় বিশ্ব বাণিজ্য মন্দায়ও বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্ভাবনা বাড়িয়ে চলেছে। প্রতিবেশী কয়েকটি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সার্কভুক্ত বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় রফতানি বাড়াতে আরেক বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশ এখন পাটজাত পণ্য, ব্যাটারি, তৈরি পোশাক, টয়লেট্রিজ পণ্য, ওষুধসহ কিছু পণ্য নেপালে রফতানি করছে। উভয় দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। সরকার বাণিজ্যিক কূটনীতি জোরদার করার জন্য বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোতে ২৩টি বাণিজ্যিক উইং খুলেছে। দ্বিপাক্ষিক (বিপিটিএ) ও আঞ্চলিক অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (আরপিটিএ), মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) সম্পাদনের লক্ষ্যে ২৩টি দেশের সঙ্গে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
চলমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য দেশী-বিদেশী শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশে এসব খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ পাচ্ছেন। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পণ্যের নব নব দ্বার উন্মোচনের সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে রফতানি বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হবে- এ বিষয়ে দেশবাসী আশাবাদী।