আইনী জটিলতা

5

অবশেষে বহুল আকাক্সিক্ষত ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১৮৯৮ সালে প্রণীত আইনটি সংস্কারের দাবি ছিল বহুদিনের। ইতোপূর্বে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়ে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এবার আইনটি সংস্কারে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত হয়েছে নয় সদস্যের কমিটির কার্যপরিধি। কমিটি যত দ্রুত সম্ভব একটি রিপোর্ট আইনমন্ত্রীর কাছে পেশ করবে।
দেশের মৌলিক আইন বলবৎ করার প্রক্রিয়া নির্ধারণ করার জন্য ব্রিটিশ শাসনামলে সিআরপিসি প্রণয়ন করা হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির কাঠামোতে তৈরি উপমহাদেশের অন্যান্য দন্ডবিধির আওতায় পড়ে এমন অপরাধের তদন্ত, অনুসন্ধান ও বিচার প্রক্রিয়া কিভাবে করা হবে তা এই কার্যবিধি দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আইনটি প্রচলিত রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার আগে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য প্রযোজ্য সকল আইনকে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল এক আদেশবলে অব্যাহত রাখা হয় এবং পরবর্তীতে সংবিধানের ১৪৯ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে অব্যাহত থাকা আইনগুলোকে হেফাজত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় পাকিস্তান আমলে প্রচলিত ব্রিটিশ-ভারতের অনেক আইন এখনও বিদ্যমান রয়েছে। এসব আইনের মধ্যে সিআরপিসি অন্যতম।
এর আগে ২০১৩ সালের শুরুর দিকে সিআরপিসি সংশোধনের একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তখন আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগ একটি খসড়া সংশোধনীও চূড়ান্ত করেছিল। শেষ পর্যন্ত আর এই প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত হয়নি। সেই সময় খসড়া সংশোধনীতে প্রতি জেলায় আপোস-মীমাংসার জন্য ‘মধ্যস্থতাকারী’ নিয়োগ করার বিধান রাখা হয়েছিল যা ব্যাপক আলোচনায় আসে। আদালতে মামলার চাপ কমানোর উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়েছিল। এর আগেও ২০১১ সালে জাতীয় আইন কমিশন দেশের ফৌজদারি বিধিমালা যুগোপযোগী করার একটি সুপারিশমালা দিয়েছিল। এবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত ফৌজদারি কার্যবিধি দিয়ে বর্তমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, জিন প্রকৌশল এবং ন্যানো প্রযুক্তির অপরাধ সম্পর্কিত মামলা পরিচালানা কঠিন। ফৌজদারি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি এবং সাধারণ মানুষের দ্রুত বিচারপ্রাপ্তির লক্ষ্যে ফৌজদারি কার্যবিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গবেষণার মাধ্যমে এই আইনটিকে আধুনিক এবং বাংলা ভাষায় প্রণয়নের কাজ চলছে।
সম্প্রতি মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনটিকে গবেষণা ও সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়ন এবং বাংলায় রূপান্তরের জন্য আইনমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। নির্দেশ আনুযায়ী আইনমন্ত্রী লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিবকে প্রধান করে নয় সদস্যের কমিটি গঠন করে তাদের কর্মপরিধি নির্ধারণ করে দেন। কমিটি বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয়ই গবেষণা করবে। একইসঙ্গে বদলেছে অপরাধের ধরন। সবাই আশা করছে কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সুচিন্তিত মতামত দেবে। রাষ্ট্র পাবে একটি আধুনিক আইন। সমাধান হবে দীর্ঘদিন ধরে সৃষ্ট নানা জটিলতা।