বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কের দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটার। ৮ কিলোমিটার সড়কে ১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় নৌকায়। নৌকায় পাড়ি দিতে গিয়ে একদিকে যেম সময় ক্ষেপন হচ্ছে অন্য দিকে ভাড়া আদায় নিয়ে প্রায়ই ঘটছে ফেরী নৌকা পারাপারকারী লোকজন ও যাত্রী সধারনের মধ্যে বাক বিতন্ডা। গত ২৭ বছর ধরে বর্ষাকালে এভাবেই উপজেলার সদরে যাতাযাত করছেন ৪ ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক জনগোষ্ঠি।
এলজিইডি সনুামগঞ্জ একাধিকবার সড়কটি যানচলাচলে উপযোগী করার লক্ষে টেন্ডার দিলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই। বছরে বছরে শুধূ গচ্ছা গেছে সরকারের কোটি টাকা। হেমন্তে কোন রকম যোগাযোগ করা গেলেও বর্ষায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী থাকে সড়ক। তখন এভাবেই কিছু পথ ঠেলে টুলে, কিছু পথ নৌকায় যাতায়াত করেন লোকজন।
জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে বাদাঘাট বাজার পর্যন্ত সড়কের দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। এই সড়ক দিয়ে বাদাঘাট, উত্তর বড়দল, দক্ষিণ বড়দল, উত্তরশ্রীপুর সহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন প্রতিদিন উপজেলা সদরের সাথে একমাত্র সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে প্রথম এলজিইডি তাহিরপুর বাদাঘট সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৯৩ থেকে শুরু করে অদ্যবদি ২০২০-২০২১ অর্থ বছর পর্যন্ত সড়কে ৬ কিলোমিটার পাকা করণ করা হয়। সদর ইউনিয়নে বৌলাই নদীর ব্রীজ থেকে বাদাঘাট ইউনিয়নে হোস্নার ঘাট পর্যন্ত সড়কটি নাম মাত্র পাকা রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে সড়কে তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ উত্তর দিক হতে জয়নাল আবেদনি কলেজ পর্যন্ত ৩৭ লক্ষ টাকার মেরামত কাজ করা হয়। ঠিকাদার নাম মাত্র কাজ করে সড়কের বিভিন্ন স্থানে। কাকাতোয়া সেতুর উত্তর পাশে ব্রিজের সংযোগ সড়ক টি বছরের অধিকাংশ সময় বিচ্ছিন্ন থাকে। হোস্নার ঘাট থেকে পাতারগাঁও ইসলামপুর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক এখনো রয়েছে কাঁচা। আর কাঁচা ২ কিলোমিটার সড়কে পানি প্রবাহের জন্য সড়কের উপর রয়েছে কমপক্ষে ৫টি সেতু। বর্ষার শুরুতে এ কাঁচা সড়কটি স্থানে স্থানে পানিতে নিমজ্জিত থাকে। আর ভোগান্তিতে পরে এ সড়কে যাতায়াত কারী ৪ ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী।
বাদাঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও ঘাঘটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মন্টু সরকার বলেন, বিদ্যালয়ের কাজে প্রায়ই উপজেলা শিক্ষা অফিসে যাতায়াত করতে হয় তাদের। তাহিরপুর বাদাঘাট ৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২ কিলোমিটর অত্যন্ত খারাপ থাকায় বর্ষাকালে তাদের মারাত্মক ভোগান্তি পরতে হয়।
বাদাঘাট সরকারী ডিগ্রি কলেজ ২য় বর্ষের পরীক্ষার্র্থী মুন্না ও মনিরাজ শাহ জানায়। কদিন হলো তাদের ডিগ্রি পরীক্ষা সমাপ্ত হয়েছে। যে দিন তাদের পরীক্ষা ছিলো সে দিন তারা কমপক্ষে পরীক্ষার দু ঘন্টা আগে বাসা থেকে বেড়িয়েছে। কলেজ যেতে গিয়ে তাদের বাইক নৌকা করে পারাপার করতে হয়েছে আর এতে তাদের সময় লেগেছে কমপক্ষে ৪০থেকে ৪৫ মিনিট।
বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক শফিকুর রহমান বলেন, সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় আমরা উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই চরম বিপাকে পরি।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, ২৭ বছর ধরে কাজ করেও কেন ৮ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না তো আমার বোধগম্য নহে।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবির বলেন,তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ সড়কের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার অবহিত করছি।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করোনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, বাস্তব ভিত্তিক পরিকল্পনা না থাকায় সড়কের কাজ সমাপ্ত করা যাচ্ছে না। আমি চেষ্টা করছি বড় কোন প্রকল্পে সড়কটি সংযুক্ত করে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে। যাহাতে লোকজন স্বাচ্ছন্দে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে পারে।