কাজিরবাজার ডেস্ক :
কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনিয়মে জড়িত কেউ অবসরে গেলে তাকেও শাস্তির আওতায় আনতে সরকারপ্রধান নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি জানান, মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনিয়ম নিয়ে বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন ও প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের অনিয়মে যারা জড়িত, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এমনকি যদি কেউ অবসরে যায়, তাকেও শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক বিভাগের সদস্য নাসিমা বেগম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পাবলিক ডিমান্ড রিকাভারি এ্যাক্ট (পিডিআরএ) নামের একটি আইন আছে। অনিয়ম করে কেউ অবসরে গেলেও সেই আইনে তাকে শাস্তির মুখোমুখি করা যায়।
২০১২ সালের ৩ মার্চ একনেকে অনুমোদন পায় ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ের কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্পটি। তিন বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও তা হয়নি। প্রকল্প অনুমোদনের নয় বছর পর এ বছরের ৫ জানুয়ারির একনেক সভায় এটির মেয়াদ ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পাশাপাশি ব্যয় বাড়িয়ে ৬৮২ কোটি টাকায় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। তখন বৈঠকের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির বিলম্বের কারণ এবং কী কী অনিয়ম হয়েছে তা তদন্তের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশনা মেনে আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে এবং সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষের মতামত ও বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়, যা নিয়ে মঙ্গলবার একনেক সভায় আলোচনা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ করা প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। আর এটির পূর্ত কাজের দায়িত্বে রয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।
আইএমইডির এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২০০৮ সালের রেট সিডিউল অনুযায়ী। এ সিডিউলকে কেন্দ্র করে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কার্যাদেশ দিতে দেরি করে। এরপর অসাবধানতার কারণে ঘাড়ে এসে পড়ে ২০১৪ সালের রেট সিডিউল। এভাবে যত দেরি করেছে, ততই প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। এভাবে ২০১২ সালে ২৭৫ কোটি টাকায় অনুমোদিত প্রকল্পটি দুইবার মেয়াদ ও একবার ব্যয় বাড়িয়ে ৬১১ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। একইভাবে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রার প্রকল্পটি ২০১৯ সালেও শেষ করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত আবারও ৭১ কোটি টাকা ব্যয় এবং সাড়ে তিন বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, একনেক সভায় অনুমোদিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী কার্যক্রম অনুসরণ না করে অনিয়মের মাধ্যমে ছোট ছোট প্যাকেজে ক্রয় কাজ করে আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বপালনকারী প্রকৌশলীরা কাজ আংশিক শুরুর পর প্রকল্প দলিলের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না করে প্রকল্পের স্থাপত্য নক্সা পরিবর্তন করেন।
সংশ্লিষ্টরা একনেক সভা থেকে সংশোধনী না নিয়ে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়েছেন। এজন্য গণপূর্ত অধিদফতরের প্রকৌশলীরা দায়ী বলে এতে উল্লেখ করা হয়। এসব অনিয়মের কারণে প্রকল্পে দায়িত্ব পালন করা পরিচালক ও গণপূর্তের প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
একনেক বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আগামী শুক্রবার চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের দ্বিতীয় চ্যানেলের কাজ শেষ হবে। এর আগে প্রকল্পের প্রথম চ্যানেলের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি আগামীবছরের ডিসেম্বর মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। আমরা ফিজিক্যাল ওয়ার্ক এখনই শেষ করে ফেলেছি। প্রকল্পের কাজ মেয়াদের অনেক আগেই শেষ হয়ে যাবে। এরপর কিছু ঘষামাজা করা হবে। এই প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ কোনটাই বৃদ্ধি পাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যয়তো বাড়বেই না বরং কিছুটা সাশ্রয় হবে।