ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ভোগান্তি

12

লাখ লাখ গাড়িচালক আছেন মহাসঙ্কটে। সাড়ে ১২ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স ঝুলে আছে বছরের বেশি সময় ধরে। একদিকে মিলছে না স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স, অন্যদিকে যোগ হয়েছে কর্তৃপক্ষের অদক্ষ অব্যবস্থাপনাজনিত ভোগান্তি। ঢাকা মেট্রো এলাকার তিনটি সার্কেল এবং ঢাকা জেলা সার্কেলসহ চারটি কার্যালয়ের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফিঙ্গারপ্রিন্ট একই স্থানে নেয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাশীদের। এসব বিষয়ে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ কোন সন্তোষজনক জবাবও দিতে পারছে না। দীর্ঘদিন থেকে এমন অচলাবস্থা উদ্বেগজনক।
গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বা বিআরটিএ ড্রাইভারদের লাইসেন্স ঠিকমতো দিতে পারছে না। বাধ্য হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন দেয়া প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ বা একনলেজমেন্ট স্লিপের সাহায্যে গাড়ি চালাচ্ছেন ড্রাইভাররা। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে সড়কে। ট্রাফিক পুলিশের মামলা ও হয়রানি বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠছে। যে সব ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে, তারাও পড়েছেন বিপাকে। স্মার্ট কার্ডের মেয়াদ না থাকায় তারাও সড়ক-মহাসড়কে মামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এক হিসাব অনুযায়ী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না প্রায় সাড়ে ১২ লাখ চালক। এতে তারা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। মূলত করোনার কারণে গত বছর থেকে শুরু হয়েছে লাইসেন্স জট। গ্রাহকরা দিনের পর দিন ঘুরছেন মিরপুরের বিআরটিএ অফিসে। গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা থেকে শুরু করে সব কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। অনেকেই বিদেশে গাড়ি চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু স্মার্ট কার্ড না পাওয়ায় বিদেশে যেতে পারছেন না। পারছেন না সরকারী-বেসরকারী চাকরিতে আবেদন করতে। ২০১১ সাল থেকে জাল, অবৈধ বা ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের প্রবণতা প্রতিরোধে ইলেক্ট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড-সংবলিত ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবস্থা চালু করা হয়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী স্মার্ট কার্ড বিতরণ আবার শুরু হয়েছে, কিন্তু তা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী অপ্রতুল। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণ প্রক্রিয়া গতিশীল না করতে পারলে গ্রাহকদের, বিশেষ করে গাড়িচালকদের জীবিকার সমস্যা সহসা দূর হবে না।
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি রয়েছে, এটি অস্বীকারের কিছু নেই। সরকার ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতি অনুসারে সক্রিয় হওয়াটাই উত্তম কাজ। প্রতিদিন হাজার হাজার গ্রাহক ধরনা দিলেও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ কোন সদুত্তর দিতে পারছে না। কবে নাগাদ এ সঙ্কটের নিরসন হবে সেটাও বলতে পারছে না বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, টানাপোড়েন ও ভেন্ডারদের স্বেচ্ছাচারিতায় এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। কালো তালিকাভুক্ত ও বিতর্কিত অখ্যাত একটি বিদেশী কোম্পানির প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়াতেই ঘটেছে এমন সর্বনাশ । লাখ লাখ মানুষের চরম ভোগান্তির জন্য বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে বিকল্প কোন উপায়ে এই সঙ্কট থেকে অল্প সময়ের মধ্যে উত্তীর্ণ হওয়া যায় কিনা, সেটিও ভেবে দেখতে হবে সরকারকে।