নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করুন

14

কোভিড-১৯ অতিমারী প্রায় আমূল বদলে দিয়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারাকে। অতিমারী থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ সামাজিক দূরত্ব মানার বাধ্যবাধকতা থাকায় দেশে দেশে দিতে হয়েছে লকডাউন-শাটডাউন। বন্ধ করে দিতে হয়েছে অফিস-আদালত, কলকারখানা, যানবাহন, হোটেল-রেস্তরাঁ এমনকি দৈনন্দিন হাটবাজার পর্যন্ত। ফলে এ সময়ে অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নিত্যপণ্য সরবরাহের পাশাপাশি তৈরি খাদ্যদ্রব্য বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা তথা ব্যবসা বেশ জনপ্রিয় ও জমজমাট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের নাগরিক জীবনে। মোটা দাগে একে বলে ই-কমার্স। বর্তমান বিশেষ করে রাজধানীতে এবং চট্টগ্রামেও অনলাইনে ফুড ডেলিভারির ব্যবসা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ খাতে বছরে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ দেড় হাজার কোটির টাকার বেশি। তবে অন্যান্য ই-কমার্সের মতো ফুড ডেলিভারিতেও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে একাধিক ক্ষেত্রে। এতে একদিকে যেমন গ্রাহক সঠিক ও মানসম্মত খাদ্যসেবা পাচ্ছেন না, অন্যদিকে সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে যথাযথ ভ্যাট ও রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে। আপত্তি উঠেছে হোটেল-রেস্তরাঁর মালিক পক্ষ থেকেও। তাদের অভিযোগ, অনলাইনে ফুড ডেলিভারিতে বিভিন্ন নামী-দামী হোটেল-রেস্তরাঁর মোড়কে নিজেদের রান্না করা ভেজাল ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে রেস্তরাঁ ব্যবসা পড়েছে হুমকির মুখে। এতে প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহকও। উত্থাপিত এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবশেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুব শীঘ্রই প্রণয়ন করতে যাচ্ছে অনলাইন ফুড ডেলিভারি নীতিমালা, যাতে সব পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত থাকে।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর এবার নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের সূচনা ঘটেছে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও অন্তর্ভুক্ত ছিল বিষয়টি। আর তাই বিষয়টি সামনে চলে এসেছে জাতীয় ইস্যু হিসেবে। মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে না, বরং বেঁচে থাকার জন্য খেয়ে থাকে। তবে দুঃখজনক হলো, কি খাচ্ছি- ভেজাল না বিশুদ্ধ এমন একটি প্রশ্ন প্রায়ই তাড়িত করে থাকে আমাদের প্রত্যেককে। কেননা, প্রায় সর্বত্র ভেজালের দৌরাত্ম্য ও দাপট। মাছ-মাংস-ডিম-দুধ-শাকসবজি- প্রায় সবকিছুই রয়েছে সন্দেহের তালিকায়। প্রধানমন্ত্রী নিজে। খাদ্যে ভেজালকে দুর্নীতি হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-মাদকের মতো এর বিরুদ্ধেও সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য সরকার পাঁচ বছর মেয়াদী একটি কর্মকৌশল প্রণয়ন করেছে, যা বাস্তবায়ন হচ্ছে পর্যায়ক্রমে। ভেজাল ও দূষণ সম্পর্কে অভিযোগ জানানো ও প্রতিকারের জন্য গঠিত হয়েছে কল সেন্টার। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সারাদেশে কাজ করছে ৪৩৫টি কমিটি। গঠিত হয়েছে ৭১টি বিশুদ্ধ আদালত। ৩৩৫ জনবল নিয়ে কাজ শুরু করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। খাদ্যের মান নিশ্চিত করতে রাজধানীসহ সারাদেশে শুরু হয়েছে হোটেল-রেস্তরাঁর গ্রেডিং। এমনকি স্ট্রিট ফুড বা পথের খাবারকেও আনা হয়েছে এই প্রক্রিয়ায়। অনলাইনে খাদ্য সরবরাহকারীরাই বা বাদ থাকবেন কেন?