টেকসই ফসল উৎপাদন

7

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প কৃষি উৎপাদনের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। যেহেতু এর কাঁচামাল মূলত কৃষিজাত পণ্য এ কারণে এ শিল্পকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়, যার মধ্যে রয়েছে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা এবং মৌসুমভিত্তিক ফসল উৎপাদন। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের রয়েছে সমূহ সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন টেকসই ফসল উৎপাদন, মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি, অতিরিক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং জনগণের পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প দেশে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি ও রফতানির ভিত্তিতে নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান অনেক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এ সেক্টরে যথাযথ বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে পারে।
কৃষিপণ্যের সঠিক বিপণনের জন্য দেশের বড় বড় কোম্পানিকে কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতে বিনিয়োগ করার জন্য কৃষিমন্ত্রীর সময়োপযোগী আহ্বানের জন্য ধন্যবাদ জানাতে হয়। সম্প্রতি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘মহামারীতে খাদ্য নিরাপত্তা এবং সরবরাহ নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। মহামারীকালেও চালের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে। উৎপাদনে কোন সমস্যা নেই; কিন্তু বিপণন ও সরবরাহ ব্যবস্থা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। মন্ত্রী তাগিদ দিয়ে বলেছেন, কৃষি প্রক্রিয়াজাতে বড় বড় কোম্পানি এগিয়ে না এলে সুষ্ঠু ও টেকসই বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে না। কথাটি যে কতটা বাস্তব, সেটি কেবল সংশ্লিষ্টরাই অনুধাবন করতে পারবেন। কৃষি উৎপাদন বেশি হলে কখনও কখনও যে বিপণন সঙ্কটের বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে মন্ত্রী যথার্থভাবেই সেটি তুলে ধরেছেন।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণপূর্বক রফতানি আয় বাড়ানো এবং খাদ্যের অপচয় রোধের অংশ হিসেবে সরকার এ্যাগ্রো ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশন পলিসি, ২০২০ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে নীতিমালায় কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার আলোচনাও চলছে। সন্দেহ নেই, এটি বাস্তবায়ন করা গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা ও বিক্রি বেড়ে যাবে বহু গুণ। দেশের কৃষিজীবী মানুষের জন্য যেমন, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য এটি সুসংবাদ বৈকি। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে দেশ।
প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে গুণগত মান উন্নয়ন ও রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানের কারখানা স্থাপন, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, প্যাকেজিং, সংরক্ষণ, সরবরাহ ইত্যাদি প্রতিটি ধাপেই যথাযথ সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করলেই আসবে বড় সাফল্য। আর সেজন্য যে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন, এ নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই।