কাজির বাজার ডেস্ক
একুশের প্রতীক্ষায় এদিন দেশজুড়ে বিরাজ করছিল তুমুল উত্তেজনা। কেমন ছিল সেই দিনটি? ছাত্রদের অনমনীয় আন্দোলনের ভয়ে ভীত হয়ে এদিন ১৪৪ ধারা জারি করে পূর্ববঙ্গ সরকার। নিষিদ্ধ করা হয় সভা-সমাবেশসহ মিছিল থেকে সব ধরনের শোভাযাত্রা। সেই সুবাদে সরকারী এক নির্দেশে বলা হয়, ‘ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করিয়া এক মাসের জন্য ঢাকা শহরে সভা, শোভাযাত্রা প্রভৃতি নিষিদ্ধ করিয়াছেন। আদেশ জারির কারণ সম্পর্কে বলা হয়, ‘একদল লোক শহরে সভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের প্রয়াস পাওয়ায় এবং তদ্বারা জনসাধারণের শান্তি ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকায় এই ব্যবস্থা অবলম্বিত হইয়াছে। কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, লালবাগ, রমনা ও তেজগাঁও থানার অন্তর্গত সমুদয় এলাকায় ইহা প্রবর্তিত হইয়াছে।’ এই নির্দেশের মাধ্যমে মূলত জনমনে ভীতি ও ত্রাস সঞ্চারের চিরাচরিত কৌশল গ্রহণ করেছিল তৎকালীন সরকার। তবে এসব ভয়-ভীতিতেও দমানো যায়নি ছাত্রদের। সরকারের ১৪৪ ধারা প্রবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে একুশের কর্মসূচী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ২০ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যার পর সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কর্মপরিষদের যে বৈঠক হয় সেখানে ১১-৪ ভোটে ১৪৪ ধারা না ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ছাত্ররা বিশেষ করে অলি আহাদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ এর বিরোধিতা করে। অলি আহাদ বলেছিলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। আগামীকাল (২১ ফেব্রæয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় যে ছাত্র সভা হবে তাতে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে যদি রায় হয় তবে আমরা ভাঙ্গার পক্ষে।’ এ প্রসঙ্গে গাজীউল হক বলেন, অলি আহাদ, মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি গোলাম মওলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম কমিটির আহŸায়ক আবদুল মতিন এরা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন। ফজলুল হক হলের সহ-সভাপতি শামসুল আলম এদের সমর্থক ছিলেন। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ও ঢাকা হলের মাঝখানের পুকুরের পূর্বপাড়ে মিলিত হন কয়েকজন ছাত্র। এদের মধ্যে ছিলেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, মুহম্মদ সুলতান, আবদুল মমিন, জিল্লুর রহমান, কামরুদ্দিন শহুদ, গাজীউল হক, আনোয়ারুল হক খান ও এম আর আখতার মুকুল প্রমুখ। তারা সেখানে আমতলার সভায় কিভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে তা ঠিক করেন। তাদের পাশাপাশি ১৪৪ ধারার ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল তিনটি পক্ষ। সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে যুবলীগের নেতা-কর্মীসহ ছাত্র নেতাদের কয়েকজন দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গ্রহণ করেন ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পৃথক সিদ্ধান্ত। পরদিন অর্থাৎ ২১ ফেব্রæয়ারি ছাত্রসভায় এর যে প্রতিফলন ঘটেছিল তা কেবল ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসেই নয় মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে হয়ে আছে প্রেরণার উৎস।