কাজিরবাজার ডেস্ক :
কয়েক বছর আগেও দেশের সর্বত্রই শকুনের দেখা মিলতো। গ্রাম থেকে শহর সবখানেই ছিল অবাধ বিচরণ। নিয়মিতই দেখা মিলতো নদীর ধারে। শহরের আনাচে-কানাচেও কম দেখা যায়নি। বিশেষ করে যেখানেই মরা প্রাণী থাকতো, সেখানে তাদের দেখা যেতো। ‘প্রকৃতির ঝাড়ুদার’ হিসেবে পরিচিত এ পাখি এখন প্রায় বিলুপ্ত।
আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস উপলক্ষে অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে সারাদেশে মাত্র ২০০ শকুন বেঁচে আছে। এর মধ্যে ১০০টি শকুনই হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রেমা বনাঞ্চলে। বিলুপ্তপ্রায় এসব শকুন সংরক্ষণে এখন কাজ করছে একাধিক সংগঠন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেনজাতীয় ওষুধের ব্যবহারের ফলেই মূলত প্রকৃতিকে সুস্থ রাখার গুরুদায়িত্ব পালনকারী এ পাখি এখন অস্তিত্ব সংকটে। এসব ওষুধ ব্যবহারের ফলে যে পশু মারা যায় সেগুলো খেলে আর হজম করতে পারে না। দ্রুত পাখিগুলো মারা যায়। এ অবস্থায় শকুন রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে সরকার। এগিয়ে এসেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তঘেঁষা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য। এখানেই শকুনের বাসস্থল গড়ে তোলা হয়েছে। এতে প্রায় ১০০টি শকুনের বিচরণ রয়েছে। তাদের সংরক্ষণে খাবার হিসেবে মাসে দুটি গরু জবাই করা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচারের (আইইউসিএন) কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার আলম বলেন, বাংলা শকুন রক্ষায় ২০১৪ সাল থেকে তারা কাজ করছেন। এজাতীয় শকুন পুরো পৃথিবীতেই একেবারে কমে গেছে। ৯৯ শতাংশেরও অধিক শকুন পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। ফলে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যা শুধু শকুন রক্ষায় কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার দেশে দুটি অঞ্চলকে শকুনের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল ঘোষণা করেছে। একটি হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বনাঞ্চল এবং অপরটি খুলনার সুন্দরবন। একই সঙ্গে সরকার এ দুটি অঞ্চলের গরুতে কিটোপ্রোফেনজাতীয় ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সারোয়ার আলম বলেন, এ ওষুধগুলো যদি পশুতে ব্যবহার না হয় এবং পশু স্বাভাবিকভাবে মারা যায়, সেগুলো খেলে শকুন আর মরবে না। শকুন বাঁচলে অ্যান্থ্রাক্স থেকেও আমরা মুক্তি পাব।
শকুন নিয়ে কাজ করা জেনিফার বলেন, রেমা বনাঞ্চলে শকুনের বংশ বিস্তার নিয়ে তারা কাজ করছেন। সেপ্টেম্বর মাসে মূলত তাদের বংশ বিস্তারের সময়। গরু জবাই করে তখন তাদের খাবার সরবরাহ করা হয়। এরা খায় আর আমরা তা পর্যবেক্ষণ করি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বর্তমানে প্রায় ২০০টির মতো শকুন আছে। এসব শকুন সুন্দরবন ও সিলেট অঞ্চলেই রয়েছে। যে হারে শকুন কমতে শুরু করেছিল, সেটি এখন থেমেছে।
ঢাকা বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ ইনাম আল হক বলেন, বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রায় এ পাখিটির শেষ যে জায়গাটি রয়েছে তা হবিগঞ্জে। রেমা বনাঞ্চলেই তারা প্রজনন করে। এর সমতুল্য নিরাপদ জায়গা বাংলাদেশে আর কোথাও নেই।
তিনি আরও বলেন, দেশে এক সময় লাখ শকুন ছিল। কিন্তু আজ সেগুলো মরে গেছে। ডাইক্লোফেনাক নামক পশু চিকিৎসায় ব্যবহৃত এক বিষাক্ত ওষুধের বিষক্রিয়ায় শকুনগুলো শেষ হয়ে গেছে। দেশে এখন মাত্র ২০০টি শকুন টিকে আছে। শেষ শকুনগুলো আমরা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।
রেমা বনাঞ্চলের বিট কর্মকর্তা ও শকুন সংরক্ষণ দলের প্রধান মোহাম্মদ আলী বলেন, শকুনকে প্রকৃতির ঝাড়ুদার বলা হয়। শকুনের যে হজম করার ক্ষমতা রয়েছে তা অন্য কোনো প্রাণীর নেই। মানুষের জন্য ক্ষতিকর যে জীবাণুগুলো রয়েছে তা খাওয়ার পর অতি সহজেই শকুন হজম করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, তাদের প্রজনন মৌসুম সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়। তাতে যেন তাদের কোনো ব্যাঘাত না হয় সে জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হয়। এখানে ১০০টিরও বেশি শকুন আছে।