আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিশোর গ্যাং বিরাট চ্যালেঞ্জ

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সারাদেশের কিশোর গ্যাং এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। আইনী বাধ্যবাধকতা কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বড় বাধা। কিশোর গ্যাংয়ের সংজ্ঞা নির্ণয়ের জন্য নতুন আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে পুলিশ। কিশোর গ্যাং অপরাধ দমনে সারাদেশের কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই তালিকা ডিজিটাল ডাটাবেজ করবে পুলিশ। সারাদেশে বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত, উপদ্রব, অত্যাচার, নির্যাতন, ক্রমবর্ধমান অপরাধ কর্মকান্ড আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য খুবই উদ্বেগজনক। কিশোর গ্যাং-এর অপরাধের মধ্যে খুন, ধর্ষণ, মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি কোন কিছুই বাদ নেই। সারাদেশে আড়াই শতাধিক কিশোরকে আটক করা হয়েছে নানা অপরাধে। কিশোর গ্যাং যাতে বিস্তার লাভ করতে না পারে সেজন্য সর্বক্ষণিকভাবে কাজ করছে পুলিশ প্রশাসন ও র‌্যাবের বিশেষ সেল। পুলিশ সদর দফতর ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
গত ৩ বছরে সারাদেশের ৬৪ জেলা, থানা, বিভাগ ও মেট্রোপলিটন এলাকায় অন্তত ১০ হাজারের বেশি কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে বলে পুলিশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। কেবলমাত্র রাজধানী ঢাকার ৫০ থানা এলাকাতেই অর্ধশতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা সহস্রাধিক। কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে দাখিল করা এক প্রতিবেদনে ১২ দফা সুপারিশ করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, কিশোর আইনও হালনাগাদ করা হচ্ছে। আইনানুযায়ী একজন মানুষ ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু হিসেবে গণ্য হয়। এই আইন অনুযায়ী একজন যুবকও শিশু হিসাবে গণ্য হচ্ছে। ফলে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। আবার বর্তমান আইন অনুযায়ী কিশোর অপরাধীদের গ্রেফতার করা যায় না। তাদের আটক করে পাঠাতে হয় সংশোধনাগারে। আইনী প্রতিকূলতার মধ্যেও কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা উদ্বেগজনক। খুন থেকে ধর্ষণ কোন কিছুই অপরাধের তালিকা থেকে বাদ নেই। মাদকাসক্তি হচ্ছে কমন অপরাধ। কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায়, শহরে-বন্দরে, মাঠে-ঘাটে সর্বত্র। সারাদেশের কিশোর গ্যাংয়ের ডাটাবেজ তালিকা তৈরি করে চলমান অভিযানকে বিশেষ অভিযানে পরিণত করে কঠোর হস্তে দমন করবে পুলিশ। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বর্তমানে কিশোর গ্যাং বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আইনী বাধ্যবাধকতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়াও যাচ্ছে না। কিশোর অপরাধ দমনে সবার আগে অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মধুবাগে আসাদুজ্জামান কমপ্লেক্সে ‘সবার হোক একটাই পণ, কিশোর অপরাধ করব দমন’ শীর্ষক জনসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেন, তিন বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ দায়িত্ব নেয়ার পর পরই সারাদেশে পুলিশের সব ইউনিটকে কিশোর গ্যাং সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বিশেষ ফাইল তৈরি করার নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক সারাদেশে কিশোর গ্যাং শনাক্তকরণ এবং গ্যাং সদস্যদের গ্রেফতার করতে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত আছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে সারাদেশে অন্তত অর্ধশতাধিক গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করেছে কিশোর গ্যাং। খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে অন্তত ৩০টি। গত তিন বছরে ভ্রাম্যমাণ আদালত দেড় শতাধিক সদস্যকে সাজা দিয়েছে। সাজাপ্রাপ্তদের অধিকাংশই গাজীপুর ও টঙ্গীর কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কিশোর গ্যাং সদস্যদের অপরাধমূলক কর্মকান্ড আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। আর এতে হুমকির মুখে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।