শোকাহত আগষ্ট

180

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন। তাঁকে কেন্দ্র করেই তো একদিন এই ভূখন্ডে উন্মেষ ঘটে জাতীয়তাবাদী চেতনার। আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় তিনিই তো ছিলেন বাঙালির স্বপ্ন ও বাস্তবতার সার্থক রূপকার। বারবার তাঁর সামনে এসেছে মসনদ, ক্ষমতা, অর্থবিত্তের ছাতছানি। মোহ ও লোভ কখনও ছুঁতে পারেনি জাতির জনককে। নানা ষড়যন্ত্রে, কূটচালে চেষ্টা চলেছে তাঁকে পথ থেকে, আন্দোলন থেকে সরিয়ে দিতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। শেষাবদি তাই একদল ঘৃণ্য পশু, এক কালরাতে রক্তে ভাসায় জাতির জনক ও স্ত্রী, সন্তান, স্বজনদের। রক্তাক্ত করে স্বাধীনতাকে।
কিন্তু রক্তে গড়া বঙ্গবন্ধুর দেহ ঘৃণ্য পশুরা কেড়ে নিতে পারলেও নিতে পারেনি আদর্শ বঙ্গবন্ধুকে। কেননা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে চিরঞ্জীব। তাই ৪৩ বছর পরও বাঙালি জাতি কৃতজ্ঞ- শ্রদ্ধা-ভালবাসায় সিক্ত করেন বঙ্গবন্ধুকে। তাঁরই রক্তে ধোয়া বাংলায় আবারও জাগে যূথবদ্ধ মানুষ। শ্রদ্ধায় স্মরণে পথে প্রান্তরে আজও ওঠে সেই সম্মিলিত রণধ্বনি- ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে।’
হঠাৎ কারোর ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, স্বাধীনতাও আসেনি। ড্রামের পর দাঁড়িয়ে কোন মেজরের হুইসেলেও আসেনি আমাদের মহার্ঘ স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ফসল আমাদের এই স্বাধীনতা। খোদ পাকিস্তানের জন্মেরও দু’মাস আগে তৎকালীন যুবনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক সমাবেশে পূর্ব বাংলার (আজকের বাংলাদেশ) স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন।
১৯৪৭ সালের ৩ জুন (পাকিস্তান জন্ম নেয় ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট) এক যুব সমাবেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘এ স্বাধীনতা (পাকিস্তানের স্বাধীনতা) আসল স্বাধীনতা নয়। পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার জন্য আমাদের আবারও লড়াই করতে হবে। এমনকি পূর্ব পাকিস্তান নাম মেনে না নিয়ে ১৯৫৫ সালের ১৫ আগষ্ট সংসদে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু এ অংশের নাম বাংলায় অর্থাৎ বাংলাদেশ নামকরণের দাবি জানান।
বস্তুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ইতিহাসের বাকঘোরানো এক সিংহ পুরুষ। বাঙালী জাতির চরিত্র সম্পর্কে তাঁর চেয়ে বোধকরি আর কেউ জানতেন না। তবুও তিনি জীবনের বিনিময়ে সেই জাতির জন্যই রচনা করেন ইতিহাসের এক অমোঘ অধ্যায়। পৃথিবীতে কোন জাতিই মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি। আর স্বাধীনতার জন্য এই স্বল্পতম সময়ে প্রায় ত্রিশ লাখ বাঙালীর আত্মদানের ঘটনাও ইতিহাসে বিরল।
শোকাহত ও অভিশপ্ত মাস আগষ্টের আজ দ্বাদশতম দিন। হাতে গোনা স্বাধীনতাবিরোধী আর তাদের দোসররা ছাড়া শোকে মুহ্যমান গোটা জাতি। রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে, পাড়া-মহল্লায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে উড়ছে বিশাল বিশাল কালো পতাকা ও ব্যানার। প্রতিটি ব্যানার-ফেস্টুনেই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখা বিভিন্ন স্লোগান। পলাতক খুনীদের দেশে ফেরত এনে ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবিতে অজস্র সংগঠনের পোস্টারে ছেয়ে গেছে প্রতিটি অলি গলির দেয়াল।
এভাবেই আগষ্টের প্রতিটি দিন শোকাবহ পরিবেশে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি স্মরণ করছেন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করা হচ্ছে প্রতিটি শোকের অনুষ্ঠানে।