মামলার জট

10

সমাজে চাঞ্চল্যকর অপরাধের ঘটনা, যেমন নৃশংস উপায়ে হত্যার ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগীর পরিবার এমনকি দেশের মানুষের প্রত্যাশা থাকে ন্যূনতম সময়ে কঠোর শাস্তি প্রদানের। আদালত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকল্পে কঠোর শাস্তির রায়ও দেন। কিন্তু দেখা যায় বছরের পর বছর এমনকি এক-দেড় দশক পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট অপরাধী শাস্তি পায় না। ফাঁসির আসামি এভাবেই দীর্ঘ জীবন পায়। বিচারিক প্রক্রিয়া তথা ডেথ রেফারেন্সের জটে কনডেম সেলে ফাঁসির আসামি বাড়ছে। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা তো আছেই, তার ওপর রয়েছে বিচারকের সঙ্কট। তাই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি সাপেক্ষে একজন ফাঁসির আসামির রায় কার্যকর হতে অনেকটা লম্বা সময় চলে যায়। অতিসম্প্রতি জুলহাজ-তনয় হত্যাকাণ্ডের ৬ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আসামিকে নিয়ে বর্তমানে দেশের নির্জন প্রকোষ্ঠে ফাঁসির আসামি রাখা হয়েছে ২ হাজার ১১ জন। অধিকাংশ মামলা ৬ মাস থেকে ১৫ বছর ধরে বিচারাধীন অবস্থায় অপেক্ষমাণ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অনেকের মামলা হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। আবার অনেকের ডেথ রেফারেন্স শেষ হওয়ার পর আপীল করেছে যা বিচারাধীন। বছরের পর বছর ধরে কনডেম সেলে আছে ফাঁসির আসামিরা। প্রতি বছরই তাই বাড়ছে ডেথ রেফারেন্স মামলার সংখ্যা।
শুধু ডেথ রেফারেন্সই নয়, সব ধরনের মামলারই জট বেড়ে চলেছে আদালতগুলোতে। মামলার ভারের কারণে ব্যাহত হচ্ছে বিচার কাজ। এ যেন ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’ এই ক্রন্দনধ্বনি ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ সম্ভবত শুনতে পায় না। বিচার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভের অন্যতম। এই স্তম্ভকে সর্ব উপায়ে সর্বতোভাবে সুস্থ রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের। এতে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে মামলা জট কমাতে প্রয়োজন যথেষ্ট বিচারক এবং লজিস্টিক সাপোর্ট। জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক অবকাঠামো, বিচারক স্বল্পতাসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। প্রতিটি সমস্যারই সঠিক সমাধান প্রয়োজন। আগামীতে আদালতের পরিধি বাড়ালে এবং আরও বিচারক নিয়োগ দান করা হলে সমস্যা অনেকটাই কমে আসার কথা। নিম্ন আদালতে প্রায়শই বিভিন্ন মামলায় ফাঁসির রায় হচ্ছে। এসব মামলা পরিচালনা করার জন্য অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিচারপতিও যথেষ্ট নয়। আপাতত অস্থায়ী ভিত্তিতে অভিজ্ঞ বিচারক নিয়োগ করে এ সমস্যার সমাধান করা যেতেই পারে। কিন্তু স্থায়ী সুফল পেতে হলে মামলার জট কমাতে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ জরুরী।