দৃশ্যমান পদ্মা সেতু

11

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন বঙ্গবন্ধু কন্যার এক দুঃসাহসিক অভিযাত্রা। নানা বিপর্যয় ও অসত্য অভিযোগকে নির্ভীক মনোবলে অতিক্রম করে কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুকে তার লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে দেয়া জাতির জন্য এক অভাবনীয় অর্জন। সেই প্রাপ্তির সুফল আজ দিবালোকের মতোই দৃশ্যমান। পদ্মা সেতুর সংযোগে যে দীর্ঘ সড়কপথ সেখানেও ইতোমধ্যে ৪০টি স্প্যানে রোড স্ল্যাব সেতুটিকে কর্মপ্রকল্পে এগিয়ে দিয়েছে। আর মাত্র ৩টি রোড স্ল্যাব বসানোর কাজও জোর কদমে এগিয়ে চলছে। সেতুটির নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা অভিমত ব্যক্ত করেন যে, এক মাস আগেই স্ল্যাব বসানোর কাজ সম্পন্ন করা এক অনন্য নজির। সেখানে যান চলাচল উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে কার্পেটিং ছাড়া আর সব কাজই গন্তব্যের কাছাকাছি। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ অগ্রগতি ৮৭.২৫ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ সিংহভাগ কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়া ছাড়াও ৬.১৫ কিলোমিটারের সেতুতে সব কটি স্ল্যাব বসে যানবাহন চলাচলের উপযোগী হয়ে গেছে। পরবর্তী কার্যক্রমে কার্পেটিংয়ের মাধ্যমে পদ্মা সেতু জনগণের জন্য খুলে দিতে তেমন কোন বাধাই থাকবে না।
সেতুর পাশাপাশি রেললাইন নির্মাণের কার্যক্রমও গতিশীল হয়েছে পুরোদমে। ২ হাজার ৯শ’ ৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে ২০২১ সালের জুন মাসে। ১ হাজার ৩শ’ ২৮টি রেলওয়ে স্টেনজারে বসেছে ১৭ ফুট প্রস্থের রেলওয়ে স্ল্যাব। নির্মাণ কাজের এমন সাবলীল গতিতে সেতুর নিচ দিয়ে হেঁটেই মাওয়া থেকে পদ্মা নদী অতিক্রম করে জাজিরা প্রান্তে যাওয়া যাবে।
২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮তম খুঁটির মাঝখানের স্প্যানের রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হয়। সেতুর সড়কপথের আর মাত্র ৮টি স্ল্যাব বসানোর কাজ বাকি। ১৮ মিটার চওড়া স্প্যানের ওপরে ২২ মিটার প্রস্থের চার লেনের সড়কপথের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেই গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুুক্ত করে দেয়ার ব্যাপারটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় রয়েছে। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপালাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে পদ্মা সেতুতে গ্যাস পাইপ লাইনও স্থাপন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সব কাজ সম্পন্ন করা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশ্বস্ত করেছেন।
বিশ্বব্যাংকের অযাচিত, ভিত্তিহীন মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার পর্যায়ে আটকে পড়লে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন কর্মদ্যোতনায় তাকে সংহতই শুধু করেননি, তার চেয়েও বেশি সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে নিজ দেশের অর্থায়নে এমন মহৎ মেগা প্রকল্পকে এগিয়ে নেয়াও অনেক বড় দৃষ্টান্ত, যা স্বপ্নের দরজায় বাস্তবের কড়াঘাতে দেশবাসীকে বিস্ময়ে হতবাক করে দেয়ার মতোই।