আনোরুজ্জামানের ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা : গ্রিন-ক্লিন-স্মার্ট সিলেট বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

7

স্টাফ রিপোর্টার
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগে নিজের ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আজ শনিবার দুপুর একটায় নগরের মির্জাজাঙ্গালে প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে তিনি এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
নির্বাচিত হলে নগরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ করার পাশাপাশি সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব সিলেট গঠন করতে চান বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘সিলেটকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যেখানে জলাবদ্ধতা থাকবে না, আবর্জনা থাকবে না, যেখানে বিশুদ্ধ পানি থাকবে। সুরমা নদী খনন করা হবে।’ পর্যটন ও প্রবাসী বান্ধব সিলেট নগর হবে সন্ত্রাস মুক্ত, ছিনতাই মুক্ত, নিরাপদ একটি নগর হবে বলে তিনি জানান।’ এসময় তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের নির্ভরতা প্রতীক হতে এসেছি।
’নির্বাচনের চার দিন আগে তিনি দ্বিতীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। এর আগে সকাল ১১টায় নগরের টিলাগড়ে নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আবদুর হানিফ কুটু। নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহারগুলো হচ্ছে, স্মার্ট নগরভবন গড়া, সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব সিলেট গড়া, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পিত নগরায়ন, নিরাপদ স্বাস্থ্যকর সিলেট, দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবান্ধব সিলেট, নারীবান্ধব সিলেট, ব্যবসা বান্ধব সিলেট, পার্ক, উদ্যান ও খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠা, সচল সিলেট, মানবিক উন্নয়নে সিলেট, প্রবাসী বান্ধব সিলেট, সম্প্রীতির সিলেট, পর্যটনবান্ধব সিলেট, সামাজিক অপরাধ নির্মূল, অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত সিলেট, নাগরিকবান্ধব সিলেট, তারুণ্যের সিলেট এবং প্রযুক্তির সিলেট গড়া।
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘নগরায়নের চাপে থাকা আমাদের এই শহর মারাত্মক পরিবেশ, প্রতিবেশ, ভ‚মিকম্প ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে আছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সবার আগে সুষ্ঠু পরিকল্পনা, সঠিক নেতৃত্ব এবং শহরের পরিবেশ-অবকাঠামোগত দক্ষতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আমি সেটিকে অগ্রাধিকার দেব।’ তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের ক্ষেত্রে সকল ওয়ার্ডে সমতা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা এবং নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৫টি ওয়ার্ডসমূহকে দ্রæত পরিকল্পনার আওতায় এনে নগরায়নের পরিবেশ নিশ্চিত করার চেষ্টা থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান নগর ভবনের দিকে তাকালেই বুঝা যায় এর অবকাঠামোগত অবস্থা কী পরিমাণ শোচনীয়। ভবনটি অর্ধেক নির্মিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
প্রধান ফটক বন্ধ, গাড়ির প্রবেশ এবং নির্গমন পথ অচিহ্নিত, সামনের খালি জায়গায় নির্মাণ যন্ত্রপাতিসম্বলিত গাড়ি পার্ক করে রাখা, বেইজমেন্টের র‌্যাম্পের ঢালেও গাড়ি রাখা- এই হলো অবস্থা। আর ভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেতো দিশেহারা হবার অবস্থা- কোথায় কী আছে; কোন দিকে কোন দপ্তর, তার কোনো সুশৃঙ্খল বিন্যাস নেই। তথ্যকেন্দ্রও অকার্যকর।’
তিনি বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠান থেকে একটি মহানগরের যাবতীয় নাগরিক সেবা পরিচালিত হয় সেই প্রতিষ্ঠান যদি অপর্যাপ্ত, অপূর্ণাঙ্গ ও অদক্ষ হয়, তখন জনগনকে কাক্সিক্ষত যুগোপযুগী সেবা প্রদান অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আমি প্রথমেই এই প্রতিষ্ঠানের উপরোক্ত সমস্যাগুলোসহ অন্যান্য বিরাজমান সমস্যা চিহ্নিত করে কার্যকর উদ্যোগী ভ‚মিকা গ্রহণ করবো।’
স্মার্ট সিটি গড়ায় জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘স্মার্ট সিলেটের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন স্মার্ট নগরভবন, অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম প্রতিষ্ঠা করে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের মাধ্যমে পরিপূর্ণ নাগরিক সেবা প্রদান নিশ্চিতে আমি উদ্যোগ গ্রহণ করবো।’
নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর ঘনবসতি, বর্জ্য-অব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা, যানজট, অবৈধ হকার-সমস্যা, জলাধার-স্বল্পতা, নিরাপত্তাহীনতাসহ যাবতীয় সমস্যার মূলে রয়েছে সুষ্ঠু বাস্তববাদী ও পূর্ণাঙ্গ একটি মহাপরিকল্পনার অভাব। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমেই পরিপূর্ণ নাগরিক সেবা নিশ্চিত সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘নাগরিকের সুস্বাস্থ্য’ নগর ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি। পরিচ্ছন্ন ও সবুজের সঙ্গে নাগরিকের স্বাস্থ্যের বিষয়টি জড়িত। স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত সরাসরি উৎপাদন ও উন্নয়নের সম্পর্ক। তাই সবার আগে নিশ্চিত করতে চাই পরিচ্ছন্ন, সবুজ এবং পরিবেশবান্ধব সিলেট। পাহাড়, টিলা ও জলাশয় রক্ষাসহ অকাল বন্যা থেকে সিলেট নগরকে রক্ষাকল্পে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে সিলেট নগরকে সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব নগরে রূপান্তর করতে হবে।’
আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘সিলেট একটি ঐতিহ্যবাহী নগর। এই নগরকে কোনো অবস্থাতেই নোংরা, দূষণ, যানজট, অনিরাপদ ও অনিশ্চয়তার নগর হিসেবে আমরা দেখতে চাই না। বর্ধিত নগর হিসেবে এখনই সময় পরিকল্পিত নগরায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, সিলেট ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শহর, আবেগের শহর, স্নিগ্ধতার শহর, লড়াই সংগ্রাম-প্রতিবাদের শহর, অর্জনের শহর, গৌরবের-গর্বের শহর, ভালোবাসার শহর, একটি প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক শহর।’ সবাইকে নিয়ে, সবার সহযোগিতা নিয়ে সিলেটকে গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার সাধ্য, বুদ্ধিমত্তা, যোগাযোগ, প্রচেষ্ঠা সব মিলিয়ে আমি সিলেটের জন্য কাজ করতে চাই। আমি এই চ্যালেঞ্জটা নিতে চাই।’ নগরকে হকার মুক্ত করার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসময় তিনি বলেন, ‘হকার মুক্ত করা না হলে নগরের সৌন্দর্য এবং নাগরিকের সুবিধা ব্যাহত হয়। তাই আমি নির্বাচিত হলে হকার মুক্ত করতে চাই আবার যারা হকার তারা আমাদেরই ভাই-স্বজন। তাই তাদেরও একটা সুন্দর পুনর্বাসন করতে চাই।’
প্রবাসীদের সুবিধায় গুরুত্ব দেবেন জানিয়ে বলেন, ‘সিলেটে দখলদারিত্ব, ভ‚মিদস্যুতা, চাদাবাজি, কিশোর গ্যাং এসব এখানে চলবে না। নির্বাচিত হলে তিন মাসের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবো।’