কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সরকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ‘ভয়ংকর ক্ষতি’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার দুপুরে দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘দেখেন- হঠাৎ করেই কঠোর লকডাউন-টকডাউন সমস্ত উধাও হয়ে গেল। এখন খুললাম-যে যেমন খুশি চলো। হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে চলছে, ফিরছে-সবকিছুই করছে। একটা জিনিসই চলছে না এটা হচ্ছে- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন শিক্ষা না পায় সেই ব্যবস্থা তারা (সরকার) করছে।’
ফখরুল বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই করোনার একটা পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেমন তারা টিকার জন্য পরিকল্পনা করেছেন, টিকা ভ্যাকসিনেশনের জন্য পরিকল্পনা করেছে, তেমন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জীবন-জীবিকার পরিকল্পনা করেছে এবং একই সঙ্গে কীভাবে শিক্ষা প্রদান করা যায় সেটার জন্য তারা পরিকল্পনা করেছে। আমাদের এখানে কোনো পরিকল্পনা নাই। এই যে একটা ভয়ংকর ক্ষতি হচ্ছে প্রজন্মের, ক্ষতি করছে প্রজন্মের।’
অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনলাইনে কারা পড়ে? একমাত্র যারা বিত্তশালী মানুষ তারাই অনলাইনে পড়াশোনা করতে পারে, আর তো কারো পক্ষে সম্ভব নয়। একটা কম্পিউটার যোগাড় করা, একটা মোবাইল সেট যোগাড় করা- সারা দেশে সেটা নাইও। গ্রামে স্কুল যেগুলো আছে সেগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ। পত্রিকায় দেখেছেন যে, ছেলেরা এখন বেলুন বিক্রি করছে, বাদাম বিক্রি করছে। স্কুল বন্ধ এখন তারা বাবা-মাকে সাহায্য করার জন্য এগুলো করছে। অর্থাৎ দে হেভ বিন অলরেডি ডাইভার্টেড।’
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির পরিচালিত কোভিড-১৯ হেল্প সেন্টারের জন্য ওষুধ সামগ্রী হস্তান্তর উপলক্ষে জিয়া পরিষদ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
করোনায় ওষুধপত্র দেওয়ায় জিয়া পরিষদকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।
টিকা নিয়ে তেলেসমাতি
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে সব দিক দিয়ে। না পেরেছে তারা চিকিৎসা দিতে, না পেরেছে তারা আমাদের জনগণকে আগাম একটা প্রিভেনটিভ ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে, না পেরেছে তারা মানুষের মধ্যে একটা আস্থা তৈরি করতে যে, আমি এখানে চিকিৎসা পাবো। টিকা নিয়ে তেলেসমাতি কাণ্ড। এত মিথ্যা কথা, এত মিথ্যা অপপ্রচার যে মিথ্যা অপপ্রচার ও ভুল তথ্য দিয়ে পুরো জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘যারা বিশেষজ্ঞ আছে তারা বলছেন যে, বয়সে মানুষের টিকা দেওয়া দরকার আমি ধরে নিই সেটা ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত টিকা দেওয়া দরকার, তাহলে আপনার টিকার প্রয়োজনীয়তাটা হয় মোটামুটিভাবে ১৩ কোটি। ১৮ কোটির দেশে ১৩ কোটি টিকা দরকার হয়। তাহলে ২৬ কোটি ডোজ টিকা লাগবে। আনে দুই লাখ, তিন লাখ, এক লাখ। তাও আবার দান, অনুদান আসে। সেখানে বলে যে, আমরা গণটিকা প্রদানের অভিযান করছি এবং প্রতিদিন এককোটি করে টিকা দেবো। অনরেকর্ড বলেছে। অথচ টিকা নাই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই যে মিথ্যা তথ্য-প্রচারণা, এদের লজ্জা-শরমও নেই। তারা ভুল তথ্য দিয়ে মিথ্যা কথা বলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। আমি একদিন বলেছি যে, এটা একটা ফ্রড গভমেন্ট।’
চীন ও রাশিয়ার করোনার টিকা উৎপাদনের বিষয়ে প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমার কথা হলো চীনের টিকাই যদি নিতে হয়, ওইটাই যদি উৎপাদন করতে হয় তাহলে প্রথমে করলেন না কেন? একটা বিশেষ প্রাণী যখন পানি খায় ঘোলা করে। এরা হচ্ছে সেই প্রাণীয় যারা ঘোলা করে খায়।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারবহির্ভূত’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, ‘আমি মনে করি উনার (ওবায়দুল কাদের) বক্তব্য রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বিবর্জিত। কোনো দায়িত্বশীল নেতার কাছ থেকে এই বিষয় নিয়ে এত কথা বলার আছে বলে আমি মনে করি না।’
সরকারি দলের নেতারা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেই চলেছে- এমন দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘তারা (ক্ষমতাসীনরা) এসব মিথ্যাচার করছে। জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে যতকিছু বলো না কেনো তাকে জনগণের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারবে না।’
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক এমতাজ আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন।