জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০২ পদের মধ্যে ৪৩ পদই শূন্য

17

জৈন্তাপুর থেকে সংবাদদাতা :
জনবল সংকটে জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলাবাসী। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রথম হতে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত ১০২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপরীতে সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৫৯ জন। কাগজপত্রে ৩৮ পদ শূন্য থাকলেও মোট ৪৩টি পদ শূন্য রয়েছে। তারমধ্যে ডেপুটেশনে অন্যত্র রয়েছে ৪জন,বহিষ্কৃত রয়েছেন ১ জন, শূন্য পদ রয়েছে ৩৮টি।
জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় ঘুরে দেখা যায় স্বাস্থ্য সেবার ভিন্ন চিত্র। অনেক সময় জরুরী বিভাগে মিলছে না ডাক্তার। সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ফিরতে হচ্ছে রোগীরা। স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই। চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে জেলা শহরে ছুটতে হয় রোগীদের।
সিলেটের অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চাইতে নানা কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি’র নিজ উপজেলা জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৪৩টি পদ শূন্য থাকায় সেবা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগের স্বীকার হতে হচ্ছে।
পার্শ্ববর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং ইউপি, আলীরগাঁও ইউপি এবং কানাইঘাট উপজেলার চতুল ইউপি’র রোগীরা জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসে। তাছাড়া সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক এবং তামাবিল স্থলবন্দর থাকায় যে কোন দুর্ঘটনায় আহত এবং স্থল বন্দরের রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসে।
উপজেলার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, বাবুল মিয়া, ইন্তাজ আলী, খায়রুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম সহ একাধিক ব্যক্তি প্রতিবেদককে বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ পর্যটন ও প্রকৃতিক সম্পদ খ্যাত এবং মন্ত্রীর নিজ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। অনেকটা বাধ্য হয়ে জেলা শহরে চিকিৎসা নিতে যেতে হচ্ছে রোগীদেরকে, আবার কোন কোন সময় দায়িত্বরত চিকিৎসক রোগিকে চিকিৎসা না দিয়ে সিলেটে রেফার করে দেন। চিকিৎসা সেবা প্রদানে রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা মিলছেনা সেবা প্রদানকারীদের নিকট হতে। অনেক সময় টাকা ছাড়া কাজ হয়না এমনও অভিযোগ রয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধসহ দ্রুত সময়ের মধ্যে সবকয়েটি পদে লোক নিয়োগ দিয়ে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার তারা দাবী জানান।
শূন্যপদ গুলোর মধ্যে প্রথম শ্রেণীতে- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা- ১টি, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী- ১টি, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী অব্স- ১টি, জুনিয়র কনসালটেন্ট এ্যানেসথেশিয়া- ১টি, মেডিকেল অফিসার (হোমিওপ্যাথিক)- ১টি, সহকারী সার্জন- ৩ টি (ডেপুটেশন-২, বহিস্কৃত-১)। তৃতীয় শ্রেণীতে- চিকিৎসক সহকারী- ২টি, চিকিৎসক সহকারী নবসৃষ্ট- ৫টি, ফার্মাসিস্ট- ২টি, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব)- ২টি, ডেন্টাল- ১টি, সহকারী নার্স- ১টি, ক্যাশিয়ার- ১টি, স্টোর কিপার- ১টি, অফিস সহকারী- ১টি, গাড়ী চালক- ১টি, মেডিকেল টেক (এস.আই)- ১টি, স্বাস্থ্য সহকারী- ৭টি। চতুর্থ শ্রেণীতে- জুনিয়র মেকানিক- ১টি, অফিস সহায়ক- ৩টি, ওয়ার্ড বয়- ১টি (ডেপুটেশন), নিরাপত্তা প্রহরী- ১টি, বাবুর্চী- ১টি, মালী- ১টি, গার্ডেনার- ১টি ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী- ১টি (ডেপুটেশন)।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত টিএইচও) ডা. মমি দাস বলেন, শূন্য পদের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরোও বলেন- পার্শ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উল্লেখিত পদ গুলোতে জনবল বৃদ্ধি করা হয় তাহলে স্বাস্থ্য সেবা বৃদ্ধি পাবে। আর অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
জৈন্তাপুর উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাহকারি অধ্যাপক শাহেদ আহমদ বলেন, ইতোপূর্বে মন্ত্রী মহোদয় কয়েক দফা শূন্য পদের তালিকা চেয়েছিলেন কিন্তু রহস্যজনক কারণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শূন্য পদের তালিকা এখনও প্রেরণ করেনি। যার ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলাবাসী।
জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কামাল আহমদ বলেন, বিভিন্ন সময় রোগীর স্বজনরা চিকিৎসা বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শূন্য পদের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়কে জানানো হয়েছে। রোগীদের সুচিকিৎসা এবং সরকারি ঔষধ পায় সে জন্য উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হবে।