কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদে সর্বশেষ প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে রাখা হয়নি ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী- চলতি বছরে কয়েক ধাপে আবেদনকারীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
তবে এ নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন ‘মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল’র সভাপতি। এতে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদে নিয়োগের ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা অন্তর্ভুক্তি চাওয়া হয়।
একইসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা অন্তর্ভুক্ত করতে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করতে বলা হয়।
‘মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল’র সভাপতি অহিদুল ইসলামের পক্ষে বুধবার (১৯ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিচুর রহমান এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
লিগ্যাল নোটিশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের (আইন শাখা) অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ও সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিবকে (আইন বাজেট ও প্রশিক্ষণ) বিবাদী করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম ও তার আইনজীবী আনিচুর রহমান জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আইনি প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হবে বলেও জানান আইনজীবী।
আইনজীবী আনিচুর রহমান বলেন, ‘কোটা প্রথা বাতিল করেছে সরকার। তারপরও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য কোটা রাখা হচ্ছে। শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা কোটা মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মতো নিম্নশ্রেণির পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হচ্ছে। এটা বীর মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে স্পষ্ট অবমূল্যায়ন।’
২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর ‘জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫’ অনুযায়ী ১৩তম গ্রেডে অস্থায়ীভাবে নিয়োগের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক’-এর শূন্যপদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ৬০ শতাংশ ‘নারী কোটা’, ২০ শতাংশ ‘পোষ্য কোটা’ এবং ২০ শতাংশ ‘পুরুষ কোটা’ রাখা হয়। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয়নি।
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল প্রথম ধাপে সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনকারীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০ মে এবং তৃতীয় ধাপে ৩ জুন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন প্রায় ১৩ লাখ প্রার্থী।
এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট মূল্য সংযোজন করের ১১তম গ্রেডে ‘কম্পিউটার অপারেটর’ ও ‘হিসাবরক্ষক’ পদে গত ২৬ মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে শারীরিক প্রতিবন্ধী, এতিম, জেলা কোটা থাকলেও ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ রাখা হয়নি।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসাব নিয়ন্ত্রকের (রাজস্ব) দপ্তরে চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ‘নিরীক্ষক রাজস্ব’ পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে শারীরিক প্রতিবন্ধী, এতিম, জেলা কোটা থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয়নি। লিগ্যাল নোটিশে এ ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ১১তম গ্রেডে ‘নির্বাহী সহকারী’, ‘তদন্তকারী’, ‘সহকারী সম্পাদক’, ১২তম গ্রেডে ‘ফটোগ্রাফার’ এবং ১৩তম গ্রেডে ‘শাটলিপিকার কাম কম্পিউটর অপরেটর’ ও ‘কম্পিউটর অপরেটর’ পদে গত ২২ সেপ্টেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এখানেও শারীরিক প্রতিবন্ধী, এতিম, জেলা কোটা থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয়নি।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে ১১তম গ্রেডে ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক’ পদে গত ২০ জুলাই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যেখানে শারীরিক প্রতিবন্ধী, এতিম, জেলা কোটা থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয়নি।
২০১৮ সালে ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করা হয়।
শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা। এর পরের দিনই পরিপত্র জারি করা হয়।
পরিপত্রে বলা হয়, ‘সব সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে এবং বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।’
এদিকে, ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে কোটা নিয়ে আগের প্রথম শ্রেণির পদ বলতে নবম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে ‘নবম গ্রেড’ এর স্থলে ‘নবম ও তদূর্ধ্ব গ্রেড’ উল্লেখ করে পরিপত্রটির সংশোধন প্রয়োজন বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
একই বছরের ২৬ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুনের (বিধি-১ শাখা) সই করা এক পরিপত্র জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, নবম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বণ্টন পদ্ধতি স্পষ্টকরণের কথা উল্লেখ করা হয়।