টিকার দুশ্চিন্তা কেটেছে ॥ প্রতি মাসে ১ কোটি ডোজ আজ সপ্তাহে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার টার্গেট

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনার টিকা নিয়ে শেষ পর্যন্ত দুশ্চিন্তা কেটে গেছে। টিকা কূটনীতি বেশ ভালভাবেই ফল দিতে শুরু করেছে। সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় ছিল এ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা নিয়ে। কারণ প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার পর ১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ প্রাপ্তি নিয়ে বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। জাপান থেকে গত শনিবার ২ লাখ ৪৫ হাজার ডোজ কোভিশিল্ড পাওয়ার পর সেই অনিশ্চয়তাও কেটে গেছে। এখন আর কোন টিকা নিয়েই কোন সঙ্কট বা অনিশ্চয়তা নেই। পর্যাপ্ত টিকার ওপর ভর করে সরকার এখন করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতি মাসে এক কোটি ডোজ করে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট হঠাৎ করে অক্সফোর্ডের টিকা পাঠানো বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশ বড় ধরনের টিকা সঙ্কটে পড়ে। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল প্রথমবারের মতো দেশে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করার পর সরকার ২৫ এপ্রিল তা স্থগিত করতে বাধ্য হয়। মূলত ভারতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপধারণ করায় দেশটির সরকার সব ধরনের টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়। হঠাৎ করে ভারত সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। অগ্রিম টাকা দিয়ে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ৩ কোটি ডোজ এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রাপ্তি বন্ধ হয়ে যায়। রফতানি বন্ধের আগে ভারত সরকারের উপহার ৩২ লাখ ডোজ এবং সেরাম থেকে কেনা ৭০ লাখ ডোজ টিকা পায় বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী, কথা ছিল জানুয়ারি মাস থেকে টানা ছয় মাস ধরে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করবে সেরাম ইনস্টিটিউট। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৫০ লাখ ডোজের পর ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ লাখ ডোজ টিকা পায় বাংলাদেশ। এরপর সেরাম থেকে আর কোন টিকা পায়নি বাংলাদেশ। ফলে উপহার আর কেনা মোট এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকা দিয়ে বাংলাদেশ টিকা দান কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।
টিকা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার আগে দেশে ৫৮ লাখ মানুষ সেরামের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। ফলে তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হলে টিকা লাগবে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ। কিন্তু সব মিলিয়ে বাংলাদেশের হাতে আছে ১ কোটি ২ লাখ। এই টিকার সব দেয়ার পরও আরও প্রায় ১৪ লাখ মানুষের এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজের ঘাটতি পড়ে। ফলে গণটিকা কর্মসূচী থামিয়ে দিতে বাধ্য হয় সরকার।
শুরু হয় বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের জোর কূটনৈতিক তৎপরতা। এ সময় সরকারের সামনে দুটি চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়ায়। একটি হলো- যে করেই হোক প্রথম ডোজ প্রাপ্তদের জন্য ঘাটতির ১৪ লাখ ডোজ টিকা সংগ্রহ এবং দ্বিতীয়টি হলো টিকা দান কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ। এ লক্ষ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের নেতৃত্বে শুরু হয় করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা।
বাংলাদেশ হন্যে হয়ে বিকল্প উৎস থেকে অন্তত ২০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা খুঁজতে থাকে। অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উদ্বৃত্ত আছে বিশ্বের এমন ৭টি দেশের কাছে সরকার টিকা চায়। অক্সফোর্ডের টিকার মজুদ আছে কিন্তু ব্যবহার করছে না এমন সাতটি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও সুইডেন। এই সাতটি দেশে অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মজুদ আছে। কিন্তু এই দেশগুলো ওই টিকা ব্যবহার করছে না। ঢাকায় এসব দেশের দূতাবাসগুলোতে গত ১০-২০ এপ্রিল পর্যন্ত চিঠি পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে অক্সফোর্ডের টিকার ঘাটতির কথা উল্লেখ করে উদ্বৃত্ত টিকা পাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহের কথা জানানো হয়। চিঠিতে বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচী অব্যাহত রাখতে দেশগুলোর সহায়তাও চাওয়া হয়।
এর মধ্যে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনার তালিকায় সর্বাগ্রে ছিল যুক্তরাষ্ট্র্র। প্রথম দফায় কূটনৈতিক চিঠি দেয়ার পর দ্বিতীয় দফায় এই দেশটির কাছে মহামারী প্রতিরোধে ভ্যাকসিন সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। যার মধ্যে ৪ মিলিয়ন তথা ৪০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন জরুরী ভিত্তিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানায় সরকার।
এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত মিশনগুলোতে অক্সফোর্ডের টিকার চাহিদার কথাও জানিয়ে দেয়া হয়। এসব মিশনকে অব্যহৃত অক্সফোর্ডের টিকা সংগ্রাহের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা পাওয়ার পর মিশনগুলো তৎপর রয়েছে। আবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেও বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদেরও সহায়তা চান টিকা প্রাপ্তির ব্যাপারে। সেই সঙ্গে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা পেতেও হাল ছাড়েনি বাংলাদেশ। অক্সফোর্ডের টিকার জন্য অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকেও অন্তত জরুরীভিত্তিতে ৪ মিলিয়ন ডোজ টিকা পাওয়ার ব্যাপারে তাগাদা দিয়ে যায় সরকার।
অক্সফোর্ডের টিকার পাশাপাশি বিকল্প উৎস রাশিয়া এবং চীন থেকে টিকা প্রাপ্তির কূটনৈতিক তৎপরতাও চালানো হয়। এই দুটি দেশ থেকে টিকা প্রাপ্তির নিশ্চিত হওয়ার পর সরকার দ্রুত দেশ দুটির উৎপাদিত টিকার নিবন্ধন প্রদান করে। বন্ধুরাষ্ট্র চীন এক্ষেত্রে দ্রুত সাড়া দেয়। তারা টিকা বিক্রির প্রক্রিয়ার মধ্যেই বাংলাদেশকে দুই ধাপে উপহার হিসাবে ১১ লাখ ডোজ টিকা প্রদান করে। পাশাপাশি চীন বাংলাদেশকে দেড় কোটি ডোজ টিকা প্রদানের জন্য চুক্তিও স্বাক্ষর করে। ফলে বিকল্প উৎস অর্থাৎ চীন থেকে উপহার হিসাবে পাওয়া টিকা সংগ্রহের পর সরকার ২৫ মে থেকে চীনা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়।
এরই মধ্যে বৈশ্বিক টিকা বিতরণের উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে টিকা পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সিনোফার্মের পর তৃতীয় টিকা হিসাবে ৩১ মে রাতে বেলজিয়াম থেকে বাংলাদেশে আসে ১ লাখ ৬২০ ডোজ ফাইজারের টিকা। পরবর্তীতে জুন মাস ফাঁকা থাকার পর ২ জুলাই রাতে এবং ৩ জুলাই ভোরে চার দফায় কোভ্যাক্স থেকে মডার্না ও চীনের সিনোফার্ম থেকে ৪৫ লাখ ডোজ টিকা এসে পৌঁছায় বাংলাদেশে। চীনের সিনোফার্ম, ফাইজার এবং মডার্নার টিকা দেশে আসার পর টিকা প্রাপ্তির জট খুললে যায়। ফলে গত ২ জুলাই থেকেই দেশে আবারও গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।
এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সরকার সবচেয়ে বেশি আশা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা পেতে ওয়াশিংটনকে কূটনৈতিক চিঠিও দেয় ঢাকা। সেই চিঠিতে অনুদান হিসেবে টিকা চায় বাংলাদেশ। যদি অনুদান হিসাবে না দেয়া হয়, তাহলে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে টিকা কিনতে বাংলাদেশ রাজি আছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে গত ৬ মে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ভ্যাকসিন সহযোগিতা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলাপ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে জানান, বাংলাদেশের প্রচুর ভ্যাকসিন দরকার, কিন্তু এই মুহূর্তে জরুরীভিত্তিতে ৪ মিলিয়ন ডোজ এ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রয়োজন। কেননা বাংলাদেশ সঙ্কটে আছে। ইতোমধ্যে অনেককেই প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সঙ্কটের কারণে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাচ্ছে না। তাই ৪ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশের খুবই জরুরী।
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জানান, তারা বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দিয়ে সহায়তা করবে। এ বিষয়ে মিশন কাজ করছে। তবে রাষ্ট্রদূত ভ্যাকসিন প্রদানের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলতে পারেননি। শুধু আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাবে।
টিকা দিতে সব দেশই বাংলাদেশকে শুধু আশ্বাসই দেয়। কিন্তু টিকা প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা আর কাটে না। ফলে হন্যে হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বারবার তাগাদা দিতে থাকেন। ভারতের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন আপাতত জরুরীভিত্তিতে ৪ মিলিয়ন ডোজ এ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য। কিন্তু কেউ আর দেয় না। ফলে এক পর্যায়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘সবাই শুধু আশ্বাস দেয়, কিন্তু কেউ তো টিকা দিচ্ছে না।’
এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চাইলে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কোভ্যাক্সের মাধ্যমে মডার্নার টিকা প্রদান করে। গত ২০ জুলাই পর্যন্ত দুই ধাপে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৫৫ লাখ ডোজ মডার্নার টিকা দিয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জুলাই রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০ লাখ ডোজ মডার্নার টিকা আসে বাংলাদেশে। এর আগে ৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিল ২৫ লাখ ডোজ মডার্নার টিকা। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫৫ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। এদিন চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে কেনা ২০ লাখ টিকাও দেশে এসে পৌঁছায়।
টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও জুলাই মাসটি হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য পয়মন্ত। এ মাসেই বিকল্প উৎস থেকে একাধিক টিকা পেলেও বহুল কাক্সিক্ষত বিভিন্ন অক্সফোর্ড বা এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রাপ্তিরও খরা কেটে যায়। এক্ষেত্রেও এগিয়ে আসে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সাহায্য দেয়া জাপান গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশকে দুই লাখ ৪৫ হাজার ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা প্রদান করে। বাংলাদেশকে বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা দেয়া এই দেশটি আরও ২৯ লাখ ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা দেবে বলে আশ্বস্ত করেছে। ফলে যারা অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছিলেন না তাদের বিষয়ে অনিশ্চয়তা কাটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের টিকা কূটনীতির একটি সফল পরিণতি ঘটল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেক প্রচেষ্টার পর বিকল্প উৎস থেকে যেমন একাধিক টিকা পাওয়া গেছে, তেমনি সবচেয়ে কাক্সিক্ষত অক্সফোর্ডের টিকাও পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত ২১ কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার বিষযে নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে মডার্না ও ফাইজার পাওয়া যাবে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ। জনসন এ্যান্ড জনসনের সঙ্গে সাত কোটি ভ্যাকসিনের চুক্তি করা হয়েছে, সেটি আগামী বছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে আসবে। রাশিয়া থেকে আসবে ৭ কোটি ডোজ। এছাড়া চীন থেকেও পাওয়া যাবে চুক্তি অনুযায়ী টিকা। এই ২১ কোটি ডোজের মধ্যে দুই কোটি ডোজ খুব দ্রুতই সরকারের হাতে পৌঁছাবে।
আগামী আগস্ট মাসে চীন আরও ৪০-৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠাবে। কোভ্যাক্সের নিয়মিত বরাদ্দ থেকে অক্সফোর্ডের ১০ লাখ ও ফাইজারের ৬০ লাখ টিকা আগামী আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ বা সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে আসার কথা রয়েছে। সেই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে চলতি মাসেই টিকার বিষয়ে চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে। চুক্তি হলে রাশিয়া থেকে প্রথম ধাপে পাওয়া যাবে ১০ লাখ টিকা। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ২ কোটি ডোজ টিকার পাওয়া যাবে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা গেছে। এর বাইরেও চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে চীনের টিকা উৎপাদন প্রক্রিয়া চলছে।
ফলে আগামী ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেয়া শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে দিনে সাড়ে আট লাখ করে প্রতি সপ্তাহে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া। এজন্য দেশে বিদ্যমান সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) কার্যকর করা হবে কোভিড টিকার ক্ষেত্রেও। গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্য অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রগুলোকেও কাজে লাগানো হবে। স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীরাও টিকাদান কার্যক্রমে অংশ নেবেন।
টিকা কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে প্রয়োজনে অতি বয়স্ক এবং যাঁরা চলাফেরা করতে পারেন না, তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এ ক্ষেত্রে নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এসব কেন্দ্রে হাজির হলেই পাওয়া যাবে টিকা। এরই মধ্যে এ জন্য মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সারাদেশে। পাশাপাশি কোভিড টিকা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় কর্মকর্তারাও বেরিয়ে পড়েছেন মাঠের প্রস্তুতি দেখতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মাঠ পর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, আমরা ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। ইউনিয়ন পর্যায়ে এনআইডি নিয়ে গেলেই টিকা নেয়া যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
টিকা আনার সঙ্গে সঙ্গে সংরক্ষণ ব্যবস্থাও সরকার বাড়াচ্ছে। দেশে এই মুহূর্তে একসঙ্গে আট কোটি ডোজ টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। তার মধ্যে ৩০ লাখ টিকা রাখা যাবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রায়। সংরক্ষণের সংক্ষমতা বাড়াতে নতুন ফ্রিজ আনা হচ্ছে। আর পুরো টিকা সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপারেও পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে আর টিকার সঙ্কট হবে না বলে জানান কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে স্বাাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডাঃ মিজানুর রহমান জানান, ‘টিকা নিয়ে আর কোন সঙ্কট নেই, আশা করি ভবিষ্যতে আর সঙ্কট হবে না। আমাদের যে পরিমাণ টিকা পাইপ লাইনে আছে এবং আরও যে টিকা পাওয়া যাচ্ছে তাতে সবাইকে টিকা দেয়া যাবে।’
২১ কোটি ডোজ টিকার ওপর ভর করে সরকার আগামী একুশ মাসের মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে চায়। এজন্য টিকাদানের ক্ষেত্রেও নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। টিকা নেয়ার বয়স কমিয়ে ৩০ বছর করা হয়েছে। আর যারা ফ্রন্টলাইনার তাদের পরিবারের সদস্যদের ১৮ বছর পর্যন্ত টিকা দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
শুরুতে মানুষের মধ্যে কিছুটা সংশয় থাকলেও এখন দেশের মানুষের মধ্যে টিকার আগ্রহ প্রবল বাড়ছে। টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে গেলেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। টিকা দেয়ার জন্য কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। এ দৃশ্য শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও এখন দেখা যাচ্ছে। করোনার ভয়াবহতা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার পর সব মানুষ এখন জীবন বাঁচাতে টিকা নেয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।
এ পর্যন্ত এক কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৯৭ জন টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। দেশে এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ডের টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৩৩ জন, ফাইজারের পাঁচ হাজার ২১৭, সিনোফার্মের ১১ লাখ ৭২ হাজার ৬২৪ এবং মডার্নার টিকা নিয়েছেন তিন লাখ ছয় হাজার ১২৩ জন।
বিএসএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে তাতে টিকা নিয়ে আর সঙ্কট হবে বলে মনে করি না। কোভ্যাক্স বড় একটি সাপোর্ট দিচ্ছে। আর অনেক দেশই এখন টিকা বিক্রি করবে। তাই টিকা কিনে নিতে পারলে কোন সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। জাপান থেকে অক্সফোর্ডের টিকা আসায় এই টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েও সঙ্কট কেটে গেল।’
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া সাত কোটি ডোজ টিকা দিচ্ছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ এখানে যৌথ উৎপাদনে যাচ্ছে। তাই টিকার ব্যবস্থাপনার দিকে এখন জোর দিতে হবে। প্রথমে আমাদের কৌশলগত কিছু ভুলের কারণে টিকা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। এখন আর সেই সমস্যা নেই। বরং এখন যারা টিকা নিচ্ছেন তাদের এক বছর পর আবারও টিকা নিতে হবে। তাই সেভাবেই টিকাদান প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে হবে।