অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা

8

সাম্প্রতিক রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। একেকটি কারখানায় শত শত এমনকি হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন। কারখানার অগ্নিঝুঁকিতে থাকা মানে শ্রমিকদেরই মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা। তাই এই উদ্বেগজনক বিষয়টির প্রতিকার জরুরী। অগ্নিঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতায় থাকা দুই সহ¯্রাধিক কারখানার মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার এলাকায় বেশি। এসব শিল্পকলকারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত সিঁড়ি বা বের হওয়ার প্রশস্ত পথ নেই। অনেক প্রতিষ্ঠানের নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। এসব শিল্প-কলকারখানা নিয়মিত পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ করার কথা থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতরগুলো যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না এমন অভিযোগ রয়েছে। লোকবল সঙ্কটও এক্ষেত্রে সমস্যা জিইয়ে রাখছে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের নানা শর্তে দেশের অধিকাংশ পোশাক কারখানা ঝুঁকিমুক্ত করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ভিন্ন পণ্য উৎপাদনের কারখানাতে নেই কোন নজরদারি। দেশের কোথাও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। একের পর এক গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। হৈচৈ চলে কয়েক সপ্তাহ। এরপর থেমে যায় সব। এমন সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যে আমরা অহরহই দেখতে পাচ্ছি কারখানার অনেক মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। যেসব কারখানায় অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই সেগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। কারখানাগুলো মনিটরিং করার কথা বলছেন কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, রাজউক ও সিটি কর্পোরেশন কাজ করছে।
আমাদের দেশে আইন না মানার সংস্কৃতি আছে, তা বলাই বাহুল্য। একই সঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করার চলও বিদ্যমান। কেবল ভবনের নক্সা করেই বসে থাকলে চলবে না। ফায়ার সেফটি কোড ও নক্সা বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, সেটা দেখতে হবে। তারপর ভবন নিয়মিত পরিদর্শন, তত্ত্বাবধান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা জরুরী। আমরা জানি কোন ভবনকে পর্যাপ্ত অগ্নিপ্রতিরোধক করতে হলে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ধাপ পালন করা অত্যাবশ্যকীয়। আগুন লাগার সম্ভাব্য কারণগুলো সম্পূর্ণভাবে দূর করাই অগ্নিনিরাপত্তা বিধানের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এটাই প্রতিরোধ। কিন্তু প্রকৌশলগতভাবে সব কারণ দূর করা সম্ভব নয়, এক শ’ ভাগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তাই প্রতিরোধের সঙ্গে সঙ্গে সুরক্ষা ব্যবস্থাও রাখতে হবে। এই দুইয়ের সমন্বয়েই তৈরি হয় একটি পূর্ণাঙ্গ অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা।
যত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তার ৮০ শতাংশই ঘটে এ তিনটি কারণে। মনে রাখা চাই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের কারণে মৃত্যু, জখম হওয়া, যন্ত্রপাতি অচল, পণ্য সরবরাহে ধীরগতি এবং কারখানার সুনাম নষ্ট হতে পারে। তাই শিল্পকারখানার অগ্নি সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। কেননা, এটি মানুষের জীবন মরণ প্রশ্ন।