কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনার টিকা নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ৯ জুলাই তিনি নিবন্ধন করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত টিকা দেয়ার জন্য এসএমএস পাননি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ৫৪ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর ১৯ জুন তিনি গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও করোনার ডেল্টা ধরনের সংক্রমণের মধ্যে ঝুঁকি এড়াতে তাঁকে বাসায় এনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, ৯ জুলাই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া টিকা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি টিকা নেয়ার জন্য এসএমএস পাননি। এসএমএস পেলে তিনি মহাখালীর ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট এ্যান্ড হাসপাতালে টিকা নেবেন।
গৃহকর্মী ফাতেমাসহ গুলশানের বাসায় ৮ জন করোনাক্রান্ত হওয়ায় ১০ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষা করা হয়। ১১ এপ্রিল রিপোর্ট প্রকাশিত হয় খালেদা জিয়া করেনাভাইরাসে আক্রান্ত। এর পর থেকে অধ্যাপক ডাঃ এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৪ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বাসায় থেকেই খালেদা জিয়া চিকিৎসা নেন। ১৫ এপ্রিল এক ঘণ্টার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যান করানো হয়। রিপোর্ট ভাল আসায় তাঁকে ওইদিন হাসপাতালে ভর্তি না করে গুলশানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে আবারও এভার কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট ভাল না আসায় ওইদিনই তাঁকে ভর্তি করা হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়ার হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ৩ মে তাঁকে ওই হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে থাকা অবস্থায় গত ২৮ মে খালেদা জিয়া হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হন। তবে ৩০ মে তার জ্বর নিয়ন্ত্রণে আসে। নতুন করে বড় রকমের কোন সমস্যা না হওয়ায় ৩ জুন তাঁকে সিসিইউ থেকে কেবিনে আনা হয়। ১৩ জুন আবারও জ্বরে আক্রান্ত হন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়। তবে হাসপাতালে শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি না হওয়ায় ১৯ জুন তাঁকে হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় নিয়ে আসা হয়।
করোনাক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই লন্ডনে অবস্থান করা খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডাঃ জোবাইদা রহমান, নাতনি জায়মা রহমানসহ দেশ বিদেশের স্বজনরা তাঁর চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে অস্থির হয়ে পড়েন। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর থাবার কারণে কিছুতেই তারা খালেদা জিয়াকে নিয়ে স্বস্তিতে থাকতে না পারায় যাবতীয় চিকিৎসাসেবা জোরদার করতে চিকিৎসকদের প্রতি নির্দেশ দেন। আর তাদের নির্দেশ মেনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও এ ব্যাপারে কোন ঘাটতি রাখেননি। প্রথমে বাসায় রেখে চিকিৎসা ও পরে হাসপাতালে নেয়া হয়। এভারকেয়ার হাসপাতালে ৫৪ দিন চিকিৎসার পরও খালেদা জিয়ার শারীরিক কিছু জটিল সমস্যার তেমন উন্নতি হয়নি।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিকিৎসকরা এখন প্রতিদিন খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন এবং সে মোতাবেক চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর ২৫ মার্চ থেকে সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এরপর থেকেই ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাঁর চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় হাসপাতালের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় বেশ কিছু যন্ত্রপাতিও সেখানে রাখা হয়েছে।