সুনামগঞ্জে করোনা সংক্রমণ বাড়লে নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে

7

সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
দেশের সীমান্তিক অনগ্রসর জেলা সুনামগঞ্জের ২৮ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসার স্থল সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতাল। চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা। মহামারি করোনা চিকিৎসায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৫০টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হলেও করোনা চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকট, মডিফাই কন্ট্রোল ব্যবস্থা সংবলিত অক্সিজেন প্ল্যান্ট না থাকা, ভেন্টিলেটর ও আইসিইউ সেবা চালু না হওয়ায় জেলার করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিযেছে। সংক্রমণের হার বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে লকডাউন সীমিত করায় দেশের বিভিন্ন স্থান লোকজনের সমাগম বাড়তে পারে সুনামগঞ্জে। এতে অন্য জেলা থেকে সংক্রমিত রোগী এসে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি থাকছে। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ ও হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি তাগাদা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ জন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ২জন। ইতোমধ্যে জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৩৭৪ জন ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৯ জন। তাছাড়া এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে আছেন ৪৩০ জন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৩ জন রোগী। হাসপাতালে সর্বমোট আইসেলেশনে রয়েছেন ২১ জন। এছাড়াও জেলার বাহিরে সিলেটে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়। দিন দিন জেলার করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনে ৫০টি শয্যায় করোনা রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন রোগীরা। আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে সাধারণ অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সেবা দেয়া হচ্ছে। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে কাজে আসছে না এসব সাধারণ অক্সিজেন সিলিন্ডার। ফলে বাধ্য হয়ে উন্নত সেবা পেতে সিলেট রেফার করতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যাপ্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন।
অপরদিকে, হাসপাতালের পুরাতন ভবনে ১০টি আইসিইউ বেড স্থাপন করতে অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর কাজ সমাপ্ত হলেও এর ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ভেন্টিলেটর সেবা প্রদানে প্রয়োজনীয় লোকবল নেই বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। করোনা চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সক্ষমতার জানান দিলেও তা কেবল কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ। পরিস্থিতি নাগালের বাহিরে গেলে ঢাল-তলোয়ার ছাড়া করোনা যুদ্ধে কিভাবে সামাল দিবেন সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে প্রশ্ন করছেন বিভিন্ন মহল।
ডা. মুরশেদ আলম বলেন, জেলার করোনা পরিস্থিতি খারাপ। প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে সংক্রমণ বাড়ছে। করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে গড়ালেও সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা অবস্থা আশানরুপ নয়। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও উন্নত অক্সিজেন সেবা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার সংকট রয়েছে। এমন অবস্থায় করোনা সংক্রমণ বাড়লে সামাল দেয়া দায় হয়ে পড়বে। ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন জেলা থেকে লোক আসবেন। তখন করোনা সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।
অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ও বিএমএ’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ডাক্তার ও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার চরম সংকট রয়েছে। সাধারণ অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে রোগীদের অক্সিজেন সেবা দেয়া হচ্ছে। মাঝারি কিংবা বেশি আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়ার সক্ষমতা সদর হাসপাতালের নেই। করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে রোগীর চাপ বাড়বে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করাসহ অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, সোমবার বিকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ১৩ জন করোনা পজেটিভসহ ২১ জন আইসোলেশন রয়েছেন। রোগীদের অবস্থা এখন পর্যন্ত ভালো আছে। সাধারণ সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সেবা দেয়া হচ্ছে। রোগীদের জন্য সাধারণ সিলিন্ডার ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। অক্সিজেন প্লান্ট ও আইসিইউ বেড স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এসব সেবা চালু করতে হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। তবে চলামান অবস্থা সামাল দিতে হাসপাতলের সক্ষমতা রয়েছে বলে জানান তিনি।
করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ টেকাতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। সকল স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।