সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং নিষ্ঠার সঙ্গে ধর্ম পালনের জন্য এদেশের মানুষের সুনাম আছে। অথচ ধর্মভিত্তিক অপরাজনীতির প্রসার এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা উচ্ছেদের নামে গুটিকয়েক মানুষ জঙ্গি হামলা চালিয়ে সুন্দর সামাজিক স্থিতিশীলতা নস্যাৎ করতে চেয়েছে বারবার। স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি আমরা প্রথম দেখি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের পরে। সে সময়ই স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী চক্র একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসর জামায়াতে ইসলামীর উত্থান। আর এ উত্থান ঘটেছিল জিয়ার গঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপির মাধ্যমে। তবে বলা দরকার, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নয়, হয় অপরাজনীতি। আর এই অপরাজনীতি মানুষের অকল্যাণে পরিকল্পিত ও পরিচালিত হয়, দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দেয়। বাংলাদেশ যখনই রুখে দাঁড়িয়েছে, উন্নয়নের মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগুনোর চেষ্টা করেছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছে তখনই আমরা দেখেছি সেই চেনা অপশক্তি ধর্মকে শিখণ্ডি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। এসবই অধর্ম। ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ হত্যার দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করেছে। একাত্তরে ধর্মের দোহাই দিয়েই এদেশে গণহত্যা চালানো হয়। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে ধর্ম নিয়ে এদেশে যারা অপরাজনীতি চালিয়ে আসছে, তারা আবার স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে বারবার আক্রমণ করছে ধর্মের দোহাই দিয়েই। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার অর্থই হলো মানুষের মধ্যে ধর্মভিত্তিক রীতিপ্রথা ও আচারের পৃথকত্বকে পুঁজি করে বিভেদের দেয়াল তৈরি করা। একইভাবে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থান বিনষ্টের পরিবেশ তৈরি করে।
ধর্মের নামে অধর্ম প্রতিরোধে ধর্মচর্চার প্রসার দরকার। সে লক্ষ্যে ইসলামের মূল্যবোধ চর্চা এবং ইসলামের সংস্কৃতির বিকাশের জন্য সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সারাদেশে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় অপূর্ব স্থাপস্থ্যশিল্প ও দৃষ্টিনন্দন ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে এক সঙ্গে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মডেল মসজিদগুলো নির্মাণ করা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অংশ। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো এর মাধ্যমে ইসলামের সংস্কৃতি, ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, দ্বীনি দাওয়াতি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা এবং প্রচার ও প্রসার ঘটানো। এই সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে যাতে মানুষ দূরে থাকে এবং ইসলাম ধর্মের যে মূল বাণী সেটা যেন মানুষ শিখতে পারে, জানতে এবং চর্চা করতে পারে। আমরা বারবার বলে আসছি, বাংলাদেশের ওপর মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ ছায়া বিস্তার করে চলেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সকল অপপ্রয়াস রুখতে হবে। তা না হলে এরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে কলুষিত করে ছাড়বে। মডেল মসজিদ এবং ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে বর্তমান সরকার দূরদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছে।