প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা মহামারি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভারতে এমন ভয়াবহ সংক্রমণের জন্য করোনাভাইরাসের যে ভেরিয়েন্ট বা ধরনটি দায়ী, তার নাম দেওয়া হয়েছে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। বিজ্ঞানীদের মতে, এখন পর্যন্ত এটি সবচেয়ে বেশি সংক্রামক এবং মৃত্যুর হারও অনেক বেশি। বাংলাদেশেও এই ধরনটি ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) শুক্রবার জানিয়েছে, ঢাকাসহ দেশের পাঁচ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এই ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে করোনায় আক্রান্ত ৫০ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে সিকোয়েন্সিং করা হয়। এতে ৮০ শতাংশ বা ৪০টি নমুনায় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকান ভেরিয়েন্টসহ আরো দুটি অপরিচিত ভেরিয়েন্টও পাওয়া গেছে। আইইডিসিআর জানায়, এই ৫০টি নমুনার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সংগৃহীত ১৬টি নমুনার ১৫টিতে, গোপালগঞ্জ থেকে সংগৃহীত সাতটি নমুনার সব কটিতে, খুলনা থেকে সংগৃহীত তিনটি নমুনার সব কটিতে এবং ঢাকা মহানগরীর চারটি নমুনার দুটিতে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই কয়টি জেলার বাইরেও এই ধরনটি ছড়িয়ে থাকতে পারে এবং উপযুক্ত প্রতিরোধব্যবস্থা নেওয়া না হলে তা ভারতের মতোই ভয়ংকর রূপ নিতে পারে।
আইইডিসিআরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সীমান্তবর্তী এলাকাসহ অন্যান্য এলাকায়ও সংক্রমণ বাড়ছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। জরুরি হলেও অনেক রোগীকে আইসিইউ বেড দেওয়া যাচ্ছে না। অক্সিজেনের ঘাটতিও মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। করোনা রোগীদের অক্সিজেনের জোগান ঠিক রাখতে গিয়ে অন্য রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক জেলার হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা নেই। অক্সিজেন সরবরাহও সীমিত। এ অবস্থায় অনেক জেলায় চিকিৎসা সংকট তৈরি হয়েছে। এমন মুমূর্ষু রোগীকে ঢাকায় নিয়ে আসাও কঠিন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, অচিরেই তা ভয়াবহ রূপ নেবে। বহু রোগীর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর আশঙ্কাও করা হচ্ছে। ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে দেখা গেছে, অধিক বয়সীদের তুলনায় কম বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ এখন করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই প্রতিরোধে গৃহীত ব্যবস্থাগুলো কঠোরভাবে পালন করতে হবে। মানুষকেও স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। টিকা প্রদান দ্রুততর করতে হবে। হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।