সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো ৫ দিনব্যাপী শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গাপূজা। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এই প্রতিমা বিসর্জন। নগরীর কীন ব্রীজ সংলগ্ন নগরীর চাঁদনীঘাটে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে সম্প্রতি সুবোধ মঞ্চ শারদীয় দুর্গা উৎসবের সমাপনী ও প্রতিমা নিরঞ্জন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
ভক্তরা নৃত্য, ঢাকঢোল, কাঁসর-ঘণ্টাসহ বিভিন্ন বাদ্য, ধূপ আরতি জ্বালিয়ে ট্রাকে করে দুর্গা প্রতিমাকে নিয়ে আসেন চাঁদনীঘাটের সুবোধ মঞ্চ’র স্থানে। পরে একে একে রাত ৮ পর্যন্ত প্রায় ৬০টি দুর্গা প্রতিমা সুরমা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। এ সময় উক্ত মঞ্চ থেকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেটের নেতৃবৃন্দ, জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দসহ জনপ্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। বিসর্জনের আশপাশ এলাকায় এ সময় উপচেপড়া ভক্তবৃন্দের ভিড় ও আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কোন অঘটনা ছাড়াই শেষ হয় এই প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান।
১৪ আশ্বিন ১ অক্টোবর শনিবার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। ৫ দিনব্যাপী এই দুর্গোৎসব উদযাপন শেষে গতকাল বুধবার বিকেলে সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ করেছেন সনাতন ধর্মের অনুসারীরা।
এর আগে দশমী দিবা ১১। ১১ পর্যন্ত। দিবা ৮।৩০ মধ্যে শ্রীশ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর দশমীবিহিত পূজা সমাপনাস্তে বিসর্জন প্রশস্তা। কুলাচারানুসারে বিসর্জনান্তে অপরাজিতা পূজা শেষ হয়। এ সময় সব অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির বিকাশের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে- এ প্রার্থনা করেন সনাতন ধর্মালম্বীরা।
জানা গেছে, বিজয়া দশমী উপলক্ষে বিভিন্ন সংঘের উদ্যোগে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় সিলেট ও মহানগরীতে। দর্পণ বিসর্জন আর দেবী আরাধনায় শেষ হয় দশমীর আচার-অনুষ্ঠান। এবার সিলেট জেলায় ৬০৬টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে সার্বজনীন ৫৫৭টি, পারিবারিক ৪৯টি পূজ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা সূত্রে জানা গেছে, সার্বজনীন আয়োজনে কোতোয়ালী থানা এলাকায় সার্বজনীন ২৯টি, পারিবারিক ১১টি, জালালাবাদ থানা এলাকায় ১৬টি, পারিবারিক ৪টি। এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় ৩৮টি, পারিবারিক ১টি। শাহপরান থানা এলাকায় সার্বজনীন ৩৮টি, পারিবারিক ১টি। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ১৩টি ও পারিবারিক ১টি। মোগলাবাজার এলাকায় ১৫টি। গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৫৬টি ও পারিবারিক ৩টি। বালাগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৩০টি ও পারিবারিক ২টি। কানাইঘাট উপজেলায় সার্বজনীন ৩৫টি। জৈন্তাপূর উপজেলায় সার্বজনীন ২০টি, পারিবারিক ২টি। বিশ্বনাথ উপজেলায় সার্বজনীন ২৪টি ও পারিবারিক ২টি। গোয়াইনঘাট উপজেলায় সার্বজনীন ৩৬টি। জকিগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ৯৯টি। বিয়ানীবাজার উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ৩৯টি, পারিবারিক ১৩টি। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ২৫টি, পারিবারিক ১টি। ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৩৭টি। ওসমানীনগর উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ২৬টি ও পারিবারিক ৮টি পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
হিন্দু পুরাণ মতে দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরত কালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায় ।
পুরোহিদের মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার গজে (হাতী) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) আসেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঝড় বৃষ্টি হয় এবং শস্য এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায় নেন নৌকায় চড়ে। যার ফলে জগতের কল্যাণ সাধিত হবে।