জনদুর্ভোগ চরমে ॥ বড়লেখায় কালভার্টে উঠতে হয় সাঁকো দিয়ে

16

বড়লেখা থেকে সংবাদদাতা :
জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রায় ৯ বছর আগে ছড়ার ওপর কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়। ওই বছরই ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কালভার্টের খুঁটির নিচের পাকা অংশ ভেঙে গিয়ে দুই পাশের গাইড ওয়ালের মাটি সরে যায়। এরপর স্থানীয়রা বিষয়টি জনপ্রতিনিধিদের জানালেও কোনো কাজ হয়নি। নিরুপায় হয়ে এলাকার লোকজন একাধিকবার কালভার্টের দুই পাশে মাটি ভরাট করে কোনোমতে চলাচলের উপযোগী করেন। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। কারণ কয়েকবার ঢলের পানিতে কালভার্টের দুই পাশের মাটি ভেসে গেছে। এরপর থেকে স্থানীয়রা কালভার্টে উঠতে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করছেন। এতে প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। যেকোনো সময় কালভার্টটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
এই হাল মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর-বাজারিতল গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছাড়র ওপর নির্মিত কালভার্টের। অভিযোগ উঠেছে, নির্মাণ কাজে অনিয়মের ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হলেও স্থানীয়রা বিষয়টি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কালভার্টটি সংস্কারে কোনো উদ্যোগই নেননি। এই অবস্থায় এলাকার মানুষজন বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।
এদিকে গত ১৬ আগষ্ট কালভার্টটি মেরামতের দাবিতে এলাকাবাসীর পক্ষে দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বৃহত্তর মোহাম্মদনগর যুবসমাজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর-বাজারিতল গ্রামের ভেতর দিয়ে একটি ছড়া বয়ে গেছে। এক সময় ওই ছড়ার ওপর বাঁশের সাঁকো ছিল। এতে চলাচল করতে গিয়ে প্রায় চারটি গ্রামের হাজারো মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো। ২০০৮ সালে স্থানীয় সাংসদ ও বর্তমান পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ওই এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন চলাচলের জন্য ছড়ার ওপর একটি কালভার্ট নির্মাণের দাবি জানান। স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাংসদ মো. শাহাব উদ্দিন ওই এলাকায় একটি কালভার্ট নির্মাণের প্রতিশ্র“তি দেন। প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী ২০১১ সালের দিকে সেখানে কালভার্ট নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরের বছর কালভার্ট নির্মাণ কাজ শেষ হলেও নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারণে ওই বছরই ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কালভার্টের খুঁটির নিচের পাকা অংশ ভেঙে দুই পাশের উয়ং ওয়ালের মাটি সরে যায়। এরপর এলাকার লোকজন একাধিকবার বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানান। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা কালভার্টটি সংস্কারে কোনো উদ্যোগই নেননি। নিরুপায় হয়ে এলাকার লোকজন কয়েকবার কালভার্টের দুই পাশে মাটি ভরাট করে কোনোমতে চলাচলের উপযোগী করেন। কিন্তু এতেও কোনো লাভ হয়নি। কারণ কয়েকবার ঢলের পানিতে কালভার্টের খুঁটির নিচের পাকা অংশ ভেঙে যাওয়ায় দুই পাশের উয়ং ওয়ালের মাটি ভেসে যায়। এই অবস্থায় স্থানীয় লোকজন কালভার্টে উঠতে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করছেন।
এলাকার বাসিন্দা এমসি কলেজের শিক্ষার্থী মো. কামরুল ইসলাম বাবু বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রায় ৯ বছর আগে কালভাটর্টি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভোগ কমেনি। কারণ যে বছর কালভাটর্টি নির্মাণ করা হয় ওই বছরই পাহাড়ি ঢলে এটির দুইপাশের মাটি সরে যায়। এরপর স্থানীয় লোকজন দুইপাশে মাটি ফেলে কোনোমতে চলাচলের উপযোগী করেন। কিন্তু বর্ষায় আসতেই সেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এলাকার লোকজন বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিদের কয়েকবার জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। নিরুপায় হয়ে সেখানে সাঁকো বানিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনাও ঘটছে। এটি দ্রুত মেরামত হলে হাজারো মানুষ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
শিক্ষক এম তারেক হাসনাত বলেন, কালভার্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এটি দিয়ে আসা-যাওয়া করেন। শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। সংযোগ রাস্তা না থাকায় গাড়িও চলাচল করে না। এজন্য সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয় রোগী ও বয়স্ক মানুষদের। এটি মেরামতে কেউই কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। তাই স্থানীয়রা বাঁশ ফেলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন মঙ্গলবার (২৫ আগষ্ট) দুপুরে বলেন, কালভার্টটি অনেক পুরনো। তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটির সংযোগ সড়ক নেই। ঢলের পানিতে সংযোগ সড়ক ভেসে গেছে। মানুষজন এখন বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে চলাচল করছেন। আমি নিজে সেখানে গিয়ে এটি দেখে এসেছি।
এটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন তাদের কাছে কোনো বরাদ্দ নেই, পেলে দেখবেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান বলেন, বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।