কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ পবিত্র মাহে রমজানের ১১তম দিবস। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের প্রতিশ্রুত মাহে রমজানের একটি দশক কিভাবে জানি চলে গেল। এ মাসের প্রথম দশক ছিল রহমতের বারিধারায় সিক্ত। প্রতিটি ফরজ ইবাদতের মূল্য সত্তর গুণ বেশি, আর নফল ইবাদতের মর্যাদা বাকি ১১ মাসের ফরজ ইবাদতের সমতুল্য। ইমানী মৃত্যুর তামান্না যার হৃদয়ে আছে তার জন্য হারানো প্রথম দশক অনেক কিছু। আল্লাহ আমাদের গত দশদিনের ইবাদতের নেক বদলা দান করুন। আজ শুরু হওয়া মাগফিরাতের দশকও অনেক আরাধ্য। যারা হেলা খেলায় প্রথম দশক কাটিয়ে দিয়েছেন তাদের জন্য মাগফিরাতের সুযোগ আল্লাহ এ দশকে দান করবেন যদি তারা ইস্তিগফার ও তাওবার মাধ্যমে পরওয়ার দিগারের কাছে আকুতি জানায়। আর মাগফিরাত প্রাপ্তির পূর্বশর্ত হলো ইস্তিগফার বা কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া এবং ইখলাসের মাধ্যমে ইমানদারির পরিচয় দেয়া। এর একটি বৈশিষ্ট্য ও প্রমাণ হলো আমলি জিন্দেগিতে হক হালালের পরিচয় দেয়া। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়, এক শ্রেণীর মুসলমান এ মাসে ইবাদত বন্দেগী ও দান সাদকায় যেমন অংশ নেন তেমনি অবৈধ পন্থায় রুজি রোজগার আর প্রতারণামূলক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিযোগিতায়ও অবতীর্ণ হয়। এ ধরনের বিপরীতমুখী চরিত্র ইসলামে কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। এক স্থানে হযরত রাসূলে কারীম (স.) ইরশাদ করেছেন : বহু লোক দীর্ঘ সফর করে (পবিত্র মক্কা শরিফে) আসে এবং অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে বলতে থাকে, ইয়া পরওয়ার দিগার! ইয়া রব…।’ কিন্তু যেহেতু সে ব্যক্তির পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পরিধেয় পোশাক পরিচ্ছদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত, এমতাবস্থায় তার দোয়া কি করে কবুল হতে পারে?- (মুসলিম, তিরমিজী)।
বস্তুত শুধু হজ নয়, যে কোন ইবাদত বন্দেগী কবুলের জন্য হালাল উপার্জন পূর্বশর্ত। আমরা এখন রমজানুল মোবারক অতিক্রম করে চলেছি। এ মাসের ইবাদত বন্দেগী কবুলের জন্যও কথাটি ষোলআনা সত্য। এ মাসে একজন মুসলমান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় সবচেয়ে বেশি ইবাদত রিয়াজতের কসরত করে থাকে। আর এখানে যদি হালাল-হারাম বাছ বিচার করা না হয় তাহলে ইবাদত বন্দেগী কবুলে অন্তরায় সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা অতি প্রবল। কেননা প্রবাদ আছে : বরবাদে গুলিস্তা কেলিয়ে, একই উল্লু কাফী হ্যায়! – অর্থাৎ সুন্দর বাগান ধ্বংস করার জন্য একটি দুষ্ট বানরই যথেষ্ট। এ যেন বিরাট দুধের পাতে সামান্য টক মিশিয়ে নষ্ট করার মতো।
আমরা সবাই জানি, হালালের সংখ্যা অগণিত বেশুমার। পক্ষান্তরে হারামের পরিমাণ খুব স্বল্প কিন্তু মানব চরিত্র এমন যে, সে চিপা গলির দিকে পা বাড়ায়। যা এক পর্যায় ধ্বংসই নিয়ে আসে। আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টত বলেন : হে মানব ম-লী! তোমরা পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার কর। – (২: ১৬৮)।। ইবাদত ও দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত হিসেবে হালাল উপার্জনকে নির্ধারণ করে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী রাসূলদেরও (অ.) নির্দেশ দিয়েছেন : ইয়া আইয়্যুহার রুসূল কুলু মিনাত ত্বোয়্যিবাত- ওহে আমার রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র খাদ্য গ্রহণ কর এবং নেক আমল কর।
আমরাও যেন এ গুরুত্বর্পূর্ণ বিষয়টির দিকে খেয়াল রেখে প্রয়োজনীয় আমল সম্পাদন করি, বরকতময় দিনগুলোতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাই হারাম পথ বর্জনপূর্বক জীবিকা অর্জনের এবং অল্পে তুষ্ট থেকে জীবন ধারণের। এ হলো পবিত্র রমজান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। মাহে রমজানে অবৈধ ও হারাম জীবিকা উপার্জনের মনোবাসনা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করার নাম ইমান। এটিই তাওবা। আর এ দশক তাওবা ও ইস্তিগফারের। আসুন কথা ও কাজে ধৈর্যশীল হই, অতিরিক্ত লোভ লালসা পরিহার করি, অল্পে তুষ্ট থাকি। যা প্রয়োজন নেই তা পরিহার করাই ইসলাম। হযরত (স.) বলেছেন : আল ইসলামু তারকুহু মা লা ইয়ানিহ।- ইসলাম হলো যাবতীয় অপ্রয়োজনীয় বিষয় পরিহার করা।