প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিশেহারা শাল্লার অনেক কৃষক

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রাকৃতিক নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়েই তাড়াহুড়া করে অনেকটাই আধপাকা ধান কেটে মাত্র অর্ধেক ফসল ঘরে তুলছেন শাল্লা উপজেলার কৃষকরা। প্রত্যাশিত ফসল না পাওয়ায় তাদের মুখে এখন হাসি নেই। রবিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিনে ছায়ার হাওরে গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখা যায়।
বসন্তের মধ্যভাগে শিলাবৃষ্টির ব্যাপক তাণ্ডবে বোরো ফসল ঘরে তোলার আশা ছেড়েই দিয়েছেলেন বহু কৃষক। কারণ, এই সময়ে ধানের পিতথোর বের হচ্ছিল। হঠাৎ প্রকৃতির এমন খামখেয়ালিপনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন উপজেলার অন্তত ৩০-৪০টি গ্রামের হাজার হাজার কৃষক। এতে আগাম জাতের বোরোধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আর হাইব্রিড জাতের ধান নতুন করে গজিয়ে উঠায় অর্ধেক ফলন হয়েছে বলে জানান অনেকেই। আবার শিলাবৃষ্টির কারণে এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেছে ফসল। এরমধ্যে ধানের গোছা কোনোটা পেকেছে আর কোনোটার গোছা নিচ থেকে গজিয়ে উঠছে। ফলে দ্বিমুখী অবস্থায় রয়েছে বোরো ফসল। এমতাবস্থায় নিচের গজিয়ে উঠা ধানছড়া পাকার আশা না করেই কেটে ফেলছেন কৃষকরা।
বাহাড়া ইউনিয়নের আঙ্গারোয়া গ্রামের বিজয় কৃষ্ণ দাস বলেন, ৮ কেয়ার জমিতে ৪০ মণ ধান পেয়েছি। ৮ কেয়ার বোরো জমিতে ধান উৎপাদন হওয়ার কথা দেড়শ মণ। তিনি বলেন, প্রথমে শিলাবৃষ্টি ক্ষতি করেছে। পরে ডেমাইয়া কিছু ধান হইছে। কিন্তু কিছুদিন আগে গরম হাওয়ায় ধান মরে যাচ্ছিল। ফলে আধাপাকা ধান কাটা শুরু করেছি। ১৩ কেয়ার জমি তিনি করেছিলেন। ফলন হয়েছে অর্ধেক। ৫ কেয়ার জমি কাটার বাকি আছে। সেখানে ৫০ মণ ধান পাবেন কিনা সন্দেহ করছেন তিনি।
হবিবপুর ইউপির আনন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা আয়েজ মিয়া বলেন, ১ কেয়ার বোরো ক্ষেতে দেড় মণ ধান হয়েছে। ৪ হাজার টাকা খরচই হয়েছে। তিনি বলেন, শিলাবৃষ্টিতে বড় ক্ষতি হয়েছে। মূলধান ক্ষেতে নাই। শিলাবৃষ্টির পরে ডেম দিয়া মোটা ধান অর্ধেক ফলেছে বলে জানান তিনি।
বর্গাচাষি হরিধন দাস বলেন, আমি ৫ কেয়ার জমি করেছি ঋণ করে। শিলাবৃষ্টি সব নষ্ট কইরা দিছে। দেড় কেয়ার জমিতে পেয়েছি ৮ মণ ধান। সাড়ে ৩ কেয়ার কাটার বাকি রয়েছে। সেখানে ৩০মণ ধান পাবো কিনা সন্দেহ আছে। তিনি আরও বলেন, সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় যে ধান ক্ষেতে হয়েছিল-ঘরে জায়গা হইলো নাও। ১শ মণ ধান ঘরে তোলার আশা করেছিলেন তিনি।
একই গ্রামের আরজু মিয়া বলেন, আমার ১ কেয়ার লালডিঙিতে ১মণ ধান পেয়েছি। কৃষক রানু দাস বলেন, আমার ৪ কেয়ার জমিতে মোটাধান পেয়েছি ৩০মণ। যেখানে পাওয়ার কথা ১শ মণ।
শাল্লা সদরের বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, ধান এবার অর্ধেক পেয়েছি। ১১ কেয়ার জমিতে ২শ মণ হওয়ার কথা থাকলেও ১শ’ মণ হতে পারে। শিলাবৃষ্টি ও গমর হাওয়ার কারণে এই ক্ষতি বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে আটগাঁও ইউনিয়নের বাজারকান্দি গ্রামের গোপেন্দ্র সমাজপতি বলেন, গরম হাওয়ার কারণে আটগাঁও ইউপির বেশকিছু গ্রামের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জমির ধান সাদা হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম. মুবিনুজ্জামান চৌধুরী বলেন, যেসব ধানের ফুল এসেছিল সেখানে শিলাবৃষ্টির কারণে ফলন কিছুটা কম হয়েছে আর হিটশকে ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষেতে পানি থাকায় কিছুটা রক্ষা হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে তিনি জানান।
জানা যায়, শাল্লা উপজেলায় ২২ হাজার হেক্টরের চেয়েও বেশি বোরো ফসল আবাদ করা হয়েছে।