গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
গোয়াইনঘাট উপজেলার হাওরে দিগন্ত বিস্তৃত সোনলী ধান। পাকা ধানের শীষ দুলছে বাতাসে। কয়েক সপ্তাহ আগেও যেখানে সবুজ মাঠ ছিলো এখন সেখানে পাকা ধানে ভরপুর। উপজেলার প্রতিটি গ্রামের মাঠে এখন হলদে সোনালি পাকা বোরো ধান শোভা পাচ্ছে। পাকা ধানের সুবাসে চাষির স্বপ্ন বাতাসে ভাসছে। হাওরে হাওরে এখন ধান কাটার উৎসব চলছে। এদিকে ফলন ভালো হওয়ায় আর দাম ভালো থাকায় কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।
হাওর ঘুরে দেখা যায়, কেউ কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। কেউ কেউ ধান নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির উঠানে। কৃষকের আঙিনায় শুধু ধান আর ধান। কৃষক-কৃষাণীরা সোনালি ধান কাটছেন, টানছেন, মাড়াই করছেন, আবার কেউবা ঝাড়ছেন। সারাদিন রোদে পুড়ে ধান কাটেন। আর রাতভর সেই ধান মাড়াই করে গৃহস্থের গোলা ভর্তি করেন। গৃহিণীরাও কৃষকের কাজে সহযোগিতা করার জন্য পুরোদমে মাঠে ধান কাটছেন।
উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন জুড়েই রয়েছে অনেক ছোট বড় হাওর। উপজেলার অধিকাংশ মানুষের একমাত্র ফসল বোরো ধান। সচরাচর বৈশাখ মাসে বোরো ফসল কেটে ঘরে তোলার কাজ চলে। কিন্তু এবার কিছুটা আগেই ধান পেকেছে। ধানের হলুদ ছড়ায় ভরে গেছে খেত। তাই এই চৈত্রের শেষে কিষান-কিষানিদের ব্যস্ততার যেন শেষ নেই।
সাতসকালে ঘুম থেকে জেগে কামলা (দিনমজুর) নিয়ে কৃষকেরা কাস্তে হাতে খেতে যাচ্ছেন। এরপর কেউ উদাসী কণ্ঠে গান গাইতে গাইতে আবার কেউ খোশগল্প করে কাটছেন ধান। গ্রীষ্মের প্রচন্ড রৌদ্র তাপে অলস দুপুরে হিজল-করচগাছের নিচে ছায়ায় বসে জিরিয়ে কৃষকেরা মুখে তুলছেন হাই আবার কেউ কেউ সাথে থাকা গামছা দিয়ে অথবা পরনের লুঙ্গি দিয়ে শরীরের ঘাম মুচছেন। সামান্য বিরতির পর আবারও ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন কৃষক।
বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্বিঘ্নে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে পারছেন কিষান-কৃষানিরা। হাওরজুড়ে সোনালি ধানের মম গন্ধে মনের আনন্দে কাজ করছেন তাঁরা। কথা বলার মতো যেন ফুরসত নেই তাঁদের। এসব ধান নিয়ে কৃষকের যেমন ব্যস্ততা, তেমনি আনন্দও লক্ষ করা যাচ্ছে। কৃষকের ধান কাটার আনন্দ গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম কেও হার মানাচ্ছে।
কৃষক ধান কেটে আঁটি বেঁধে কেউ মাথায় করে এনে এক জায়গায় পারা দিচ্ছেন। হাওয়রেই চলছে ধানমাড়াইয়ের কাজ। তবে পূর্বেকার মাতো হই হুল্লোড় করে গরু দিয়ে ধান মাড়াই করা, মহিষের গাড়ি দিয়ে অথবা নৌকা বোঝাই করে ধান বাড়িতে নিয়ে আসার চিত্র এখন দেখা যায় না। বেশিরভাগ হাওরে পরিবহন যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে তাই অনেকেই গাড়ি করে ধান বাড়িতে নিয়ে আসেন। কৃষক মজর আলি বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বৈশাখ মাসে পুরো ধান কাটা শুরু হলেও আগাম জাতের বিভিন্ন ধান চৈত্রের শেষ সপ্তাহে কাটা শুরু হয়েছে এবং জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত চলবে।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ধান পেকে হলুদ ছড়া নুয়ে পড়েছে। মৃদু বাতাসে দুলছে সেই ছড়া। কোনো কোনো হাওরে আবার ধান কেবল পাকতে শুরু করেছে। দিন দশেক বাদে সে ধান কাটার উপযোগী হবে।
উপজেলার সিলচান হাওরে ধান কাটছিলেন কৃষক গোলাম রব্বানি ও ফয়জুল হাসান তারা জানান, চলতি বছর ১২ একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। সাত-আট দিন আগে তাঁর অধিকাংশ জমির ধান পেকেছে। গতবারের মতো এবারও ফলন ভালো হয়েছে। দুই দিন আগে থেকে ধান কাটতে শুরু করেছেন। বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ ধান হবে ইনশাল্লাহ। কিছু কিছু এলাকায়, কয়েক দিন আগের খরা ও ভারী শিলাবৃঅষ্টিতে দুই থেকে চার আনা ধান নষ্ট হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আলী জানান, পুরো উপজেলা জুড়ে ব্যাপক হারে ধান কাটা শুরু হয়েছে এই পর্যন্ত ৩০% ধান কাটা হয়ে গেছে এপ্রিলের ৩০ তারিখের মধ্যে ৯০% ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন ৮০% ধান পেকে গেলেই ধান কর্তন করে নেওয়ার প্রচারণা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বছর উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ৯ হাজার ৭ শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় ভালো ফলন হয়েছে।