কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ মাহে রমজানুল মোবারকের ৫ম দিবস। এ মাস মুসলমানদের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাজবদ্ধতা ও সামাজিক কল্যাণে উদ্বুদ্ধ হওয়ার সময়। বাকি এগারো মাসে সুপ্ত কল্যাণ চিন্তা এ মাসে বিকশিত হয়। আজ আমরা এ সংক্ষিপ্ত সময়ে যুগে যুগে মানব কল্যাণে এগিয়ে আসার কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরব। প্রাচীনকাল হতেই সকল দেশের মানুষের একটা বৃহৎ অংশ বিপদ-আপদ, দুঃখ-দরিদ্র, ক্ষুধা, অভাব-অনটনে কষ্ট ভোগ করে আসছে। অন্যদিকে সমাজের অন্য একটি অংশ আরাম-আয়েস ও আনন্দ-আমোদে দিন কাটাচ্ছে ও সহায় সম্পদের অধিকারী হয়ে দেদার ভোগবিলাসে কালাতিপাত করে আসছে। সমাজের বিত্তশালী পরোপকারী মহৎ ব্যক্তিরা মানবিক অনুভূতিতে তাড়িত হয়ে ও ধর্মীয় অনুশাসনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিপদগ্রস্ত লোকদের সাহায্য করে থাকে। যুগে যুগে অভাব-অনটন, দুঃখ-দরিদ্র, বিপদ-আপদে সাহায্য করাই ছিল সমাজ সমৃদ্ধির পহেলা নম্বর কাজ। বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ মানুষেরা। পারলৌকিক মুক্তির আশায় সমাজের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে কাজ করতেন। বিভিন্ন ধর্মের পীর-ফকির, মুর্শিদ, যাজক, পুরোহিত ও ভিক্ষুদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তারা মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার মাধ্যমে সমাজকল্যাণমূলক কাজ করছেন। হিন্দু ধর্মের বদান্যতা, বৌদ্ধ ধর্মে জীবপ্রেম, খ্রীস্টান ধর্মে চ্যারিটি এবং ইসলাম ধর্মে দানশীলতার ওপর অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (স.) কত সুন্দর বলেছেন : যে ব্যক্তি প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে নিজে পেট ভরে খায় সে প্রকৃত মুসলমান নয়।
ইসলাম মানুষকে তার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর ভিত্তিতে মর্যাদা ও স্বীকৃতি দান করে। ইসলাম মানুষকে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। আর তাই আল্লাহর সকল সৃষ্টির মধ্যে মানুষের স্থান সর্বোচ্চ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন : আমি অবশ্যই পৃথিবীতে মানুষকে আমার প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছি। এভাবে ইসলাম ধর্ম মানুষের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বকে সম্মান দেখিয়েছে। ইসলাম মানুষকে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার-বিশ্লেষণ করে। এটা শুধু একটা ধর্ম বা বিশ্বাসই নয় বরং মানুষের জীবনের সকল দিকের সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাধান ইসলাম ধর্মে খুঁজে পাওয়া যায়। ইসলাম ধর্মে সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদার ক্ষেত্রে সব মানুষই সমান। তাই সোনালি যুগে একজন কৃতদাসও ইসলামের শ্রেষ্ঠ সেবকের মর্যাদা পেয়েছিলেন। একজন চাকর নিজ যোগ্যতাগুণে একটি বিশাল সাম্রাজ্যের বাদশা নিযুক্ত হয়েছিলেন।
সুখী ও আদর্শ সমাজ জীবনের অন্যতম উপাদান হচ্ছে মানুষে মানুষে পারস্পরিক সম্পর্ক দ্বারা একে অন্যকে সাহায্য করা। ইসলাম ধর্মও এ নীতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তুলে ইসলাম যে সাম্য ও সহমর্মিতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তা খুবই বিরল। ইসলাম ছোট বড় সবার জন্যই তার সাহায্যে হাত বাড়িয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেন : সমাজসেবা সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কাজ। রাসূলে খোদা (স.) আরও বলেছেন : গোটা সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার (পালিত)। আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সৃষ্টি সে যে তাঁর পরিবারের (সদস্যদের) সঙ্গে সদাচার করে (মেশকাত প-২১৭)। ইসলাম মানুষের কর্তব্য বা দায়িত্বকে দু’ভাগে ভাগ করেছে ১. স্রষ্টার সঙ্গে মানুষের কর্তব্য, ২. সৃষ্টির প্রতি সৃষ্টির দায়িত্ব ও কর্তব্য।
ইসলাম মানব কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রথা ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। যাকাত, বায়তুল মাল, ওয়াকফ ইত্যাদি আর্থসামাজিক কল্যাণধর্মী কর্মকা-ের অবদান অনস্বীকার্য। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেসব এতিমখানা, সরাইখানা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সে সবের পেছনে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও প্রতিষ্ঠানের প্রত্যক্ষ অবদান রয়েছে।
ইসলামী জীবন যাত্রায় যাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে ধনী গরিবের সমতা বিধানের জন্য যাকাত একটি কল্যাণমূলক ব্যবস্থা। সমাজের বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাও যাকাত প্রবর্তনের একটি প্রধান লক্ষ্য। যাকাত ধনী ব্যক্তির দ্বারা গরিবের প্রতি কোন অনুকম্পা প্রদর্শন নয়, বরং এটা গরিবের হক।